শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কবে থেকে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হবে জানালেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের যে আহ্বান জানালেন শিক্ষামন্ত্রী চেয়ার বেয়ে উঠে পুলিশ কর্মকর্তার আঙুলে সাপের কামড় ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর ছাড়া বিএনপি নেতারা, ভয়ে আছে কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০৪ মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই কাঠালিয়ায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে বাঁধা, পুলিশের লাঠিচার্জ ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ, আহত-৪ কাঁঠালিয়ায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মসজিদের ইমামের সংবাদ সম্মেলন কাঠালিয়ায় হেলিকপ্টারে করে বউ আনলেন সুমন তালুকদার কোটা আন্দোলন : এক দিনে গেল ছয় প্রাণ
ঝালকাঠিতে পরিশ্রমে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি অপরাজিতা বাউল ছালমা বেগম

ঝালকাঠিতে পরিশ্রমে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি অপরাজিতা বাউল ছালমা বেগম

ঝালকাঠিতে পরিশ্রমে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি অপরাজিতা বাউল ছালমা বেগম

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

ছোটবেলা থেকেই গুনগুন করে গাওয়া গানের সঙ্গে বেড়ে ওঠা ছালমার। গান নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না তার। মানুষের দুঃখে কষ্টে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বভাবের গুণে ছালমা ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এবং বর্তমানে তার আরও একটি পরিচয় হলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য তিনি। বাউল ছালমাকে নিয়ে লিখা কিছু কথা।

প্রত্যন্ত এলাকার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম। পরিশ্রমী বাবার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ছোটবেলায় মাটি কাটা, ফসলি জমিতে কাজ করা, গাছে ওঠা, মাছ ধরা, নৌকা চালানোসহ গ্রামীণ জীবনে একটু সুখের আশায় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই পিতার সঙ্গে কাজের সময় গুনগুন করে মনের সুখে গান গাইতেন। গানের প্রতিও ঝোঁক ছিল তার চরম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও তিনি যেভাবে পারতেন সেভাবেই গান গাইতেন। অভাবী কৃষক পরিবারের কর্তা হয়েও নিজের ভেতরে ছেলের জন্য হাহাকার লালন করতেন না বাবা ইয়াকুব আলী। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। তবে আর্থিক দীনতার কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে আর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার ভাগ্য হয়নি। বিদ্যালয়ের হয়ে সংগীত পরিবেশনে ইতিমধ্যে উপজেলা ছাড়িয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজন কারও কোনো অসুবিধা অথবা বিপদ শুনলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। গান পরিবেশনের ফলে তার শৈল্পিক চাহিদা দিন দিনই বাড়তে থাকে। বেশিরভাগ বাউল সংগীত পরিবেশন করায় ‘বাউল ছালমা’ হিসেবে সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মানবিক সেবামূলক কাজ করায় স্থানীয়সহ উপজেলা পর্যায়ে মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন। জড়িত হন অপরাজিতা নারী নেটওয়ার্কের সঙ্গে, বৃদ্ধি পায় মানসিক সাহস ও মনোবল। ২০২১ সালের ২১ জুন অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে বই প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ২০২২ সালে রাজাপুর উপজেলা ও ঝালকাঠি জেলা পর্যায়ে “সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী” বিষয়ের উপর শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হওয়ায় মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আয়োজনে জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান খান তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। কথাগুলো বলছি রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার কল্যাণ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতি ফাউন্ডেশনের বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছালমা বেগমর।

যেভাবে বাউল হয়ে বেড়ে ওঠাঃ-

ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের ইয়াকুব আলী ও মমতাজ বেগম দম্পতির ঘরে ছালমা বেগমের জন্ম। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থার মধ্যে ছালমা বেগম ডানপিটে স্বভাবের হয়ে ওঠেন। বাড়ি সংলগ্ন দক্ষিণ বড়ইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে করে ওই এলাকার নাসিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পিতার আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হলে স্থানিয় এক সমাজসেবক ছালমার প্রতিভা দেখে রাজাপুর মডেল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করান। অর্থাভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি ছালমার। এর পরপরই বিয়ে হয়ে যায় তার। ওই গ্রামের আলমগীর শরীফের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ছালমার। প্রতিবেদককে ছালমা বেগম বলেন, স্বামী ও তার পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংগীত চর্চা ও মানবিক সমাজসেবামূলক কাজের গতি আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় ব্যস্ত সময় কাটাতে শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই সংগীতপ্রেমী হওয়ায় নিজেই অর্ধশতাধিক গান রচনা, সুর দেওয়া ও সংগীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি ঝালকাঠি জেলার সনামধন্য গীতিকার ডাঃ জহিরুল ইসলাম বাদলের লেখা প্রায় তিন শতাধিক বাউল গানের মৌলিক শিল্পীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এক হাজারেরও বেশি গান মুখস্থ রয়েছে। ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমন্ত্রিত হয়ে বাউল, লোক, বাওয়াইয়া, ছায়াছবি ও ফোক গান পরিবেশন করি। যার মাধ্যমে দেশব্যাপী বাউল ছালমা হিসেবে পরিচিতি অর্জনের সৌভাগ্য হয়।

তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধী গ্রাম খ্যাত বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট বড়ইয়া গ্রামে অসহায়, দুস্থ, দারিদ্র্যপীড়িত, প্রতিবন্ধী মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে সাধ্যমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সহযোগিতা করেছি। আর্থিক সংকটে পরিবারে নিজেদেরই স্বাভাবিক জীবনযাপনে হাঁসফাঁস অবস্থা। তখনই চলে আসে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের গুঞ্জন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য এলাকার মানুষ আমাকে অনুরোধ করে। নির্বাচনি ব্যয়ের দিক চিন্তাভাবনা করে হতাশ হয়ে অপারগতা প্রকাশ করলেও নাছোড়বান্দা এলাকাবাসীর অনুরোধ আর উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জনসমর্থন দিন দিন বাড়তে থাকে। অবশেষে নির্বাচনে বই মার্কায় অংশ নিয়ে সামান্য অর্থ ব্যায় করে বিজয় অর্জন করি।

সেবামূলক কর্মকাণ্ডঃ-

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় “সিডর” পরবর্তী থেকে বড়ইয়া গ্রামে অসহায়, দুস্থ, দারিদ্রপীড়িত, প্রতিবন্ধী মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে সাধ্যমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সহযোগিতা করেন ছালমা। রক্তদানের মতো উন্নত ভাবনা ছড়িয়ে দেন গ্রামের মানুষের মধ্যে। রক্তদানে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং মুমূর্ষ রোগীর জীবন বাঁচাতে ১৫ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন তিনি এবং শতাধিক রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছে। বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং প্রতিরোধ ও মাদক নিরসনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখে বিভিন্ন ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন ছালমা। পারিবারিক বিরোধ নিরসনে, প্রাথমিক আইনি পরামর্শ দেওয়া, অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসায় এলাকায় তিনি সর্বজনবিদিত।

বাউল ছালমা জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় কষ্ট কী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমি। পিতা-মাতা ও শশুর-শাশুরীর সব কাজে সহায়তা-সহোযোগিতা করে তাদের দোয়া ও ভালবাসা অর্জন করেছি। কোনো পথের কাঁটা থামাতে পারেনি আমাকে। প্রবল ইচ্ছা, কাজে মনোযোগ ও দৃঢ়তা থাকলে সবক্ষেত্রেই সফল হওয়া যায়। আমি বর্তমানে অপরাজিতা নারী নেটওয়ার্কের জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও স্ব উপজেলার সাধারণ সম্পাদক এবং নিজের সৃষ্ট সংগীত বিষয়ক নিবন্ধকৃত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “ছালমা যুব সংস্থা ও শিল্পীগোষ্ঠী”র সভাপতিসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জড়িত রয়েছি। এছাড়াও আমি একজন দক্ষ আত্মকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের ২১ টি দপ্তরে প্রশিক্ষণ গ্রহন পুর্বক সনদ প্রাপ্তি হইয়া বাসায় সেলাইয়ের কাজ, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও গরু মোটাতাজা করনসহ বাড়ীর আঙ্গিনায় বিভিন্ন প্রজাতির শাখ সব্জি চাষ করে আসছি। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। সুজলা-সুফলা এ মাটির উর্বর শক্তি খুবই বেশি। মাটিতে পরিশ্রম দিলে মাটি কখনো কাউকে খালি হাতে ফেরায় না। যে যেভাবে পরিশ্রম করবে, সে সেভাবে পারিশ্রমিক মাটি থেকে ফিরিয়ে পাবে। নৈতিকতা, দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী হলে লক্ষ্য পূরণে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

সম্পাদকীয় কার্যালয়: কাঠালিয়া বার্তা
কলেজ রোড, কাঠালিয়া, ঝালকাঠি।
মোবাইল: 01774 937755









Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana