মফিজ সাহেব বসে আছেন। অভি মনে মনে ভাবে হয়তো তিনি বড় ধরনের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। অভি’র নিজেরই সমস্যার অন্ত নেই। এ অবস্থায় অন্যের সমস্যার কথা শুনতে ইচ্ছে করে না। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অভি বললো, ‘মামা, কেমন আছেন?’
কোনো ভূমিকায় না গিয়ে আর্তনাদের সুরে মফিজ সাহেব বললেন- ‘ভাইগ্না, শান্তি নাই!
মফিজ সাহেবের স্ত্রীর ডাকনাম শান্তি। চমকে ওঠে অভি! নাই মানে! মরবার আগে অসুখ-বিসুখ বা সেরকম কিছু হলেতো জানতো অভি। তবে কী তিনি বেমক্কা অক্কা পেয়ে গেলেন? কোনো নোটিশ ছাড়াই তার হাতে অনন্তপুরের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হলো? জোরে ইন্নালিল্লাহ পড়ার পরে জিজ্ঞেস করলো অভি, ‘ঘটনা কবে ঘটল! মামি কীভাবে মারা গেলেন?’
অভি’র কথা শুনে মফিজ সাহেবের চোখ ছোট হয়ে গেল। বললেন, তোমার মামি মারা গেছে, এই কথা তোমারে কে বললো?’
লে হালুয়া। এ যে ধমকের সুরে বলছেন মফিজ সাহেব! দ্বিধাগ্রস্ত হলো অভি। স্ত্রীর শোকে মামার মাথার নাট বল্টু ঢিলে হয়ে যায়নি তো? ক্ষীণকণ্ঠে বলে অভি, ‘আপনেই তো বললেন… শান্তি… মানে মামি নাই…..
মফিজ সাহেব শব্দ করে হাসতে লাগলেন। পরে বললেন, ‘একটা জ্যান্ত মানুষরে তুমি মাইরা ফেললা?’
অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে কিছু বলার চেষ্টা করতেই মামা বললেন, ‘আমি বলছি তাল আর তুমি বুঝছ ছাল। আরে! আমি আমার বউ শান্তির কথা বলি নাই, মনের শান্তির কথা বলছি।’
‘মনে শান্তি না থাকলে বনে যান, মামা।’
‘বাহ! তুমিতো ভালোই বুদ্ধি দিলে! আমি আসলে বনে যাওয়ার নিয়ত কইরাই তোমার কাছে আসছি। আমরা তেলমারা জাতি হিসেবে এতোটাই বিখ্যাত যে রান্নার সয়াবিন তেল সহ সব ধরনের তেলের দাম দিনকে দিন উর্ধগতি! তেল কিনতে জীবন ওষ্ঠাগত প্রায়। এদিকে বাজারে শাক সব্জি কিছুতেই আগের মতো স্বাদ নেই! এতো পরিমান রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করে শাক সব্জি উৎপাদন করে যে, স্বাদ পাওয়া যায়না আর মানব দেহে এসব খাওয়াও ক্ষতিকর। এসব দেখারও যেন কেউ নেই! কোথায় বাস করছি আমরা….’
কথার কথা হিসাবে বনে যেতে বলেছে অভি। কিন্তু এই লোক তো সত্যি সত্যি বনবাসী হওয়ার পরিকল্পনা করে বসে আছে! অভি অবাক হয়ে বললো, ‘বনে গেলে আপনার সংসার দেখবে কে?’
‘সংসারের দায়িত্ব তোমার মামির কাছে হ্যান্ডওভার করছি।’
‘তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই নাই। কোথায় যাবেন, ঠিক করেছেন?’
‘সুন্দরবনে গেলে কেমন হয়?’
‘মন্দ হয় না। তবে সেখানে এখনো কিছু রয়েল বেঙ্গল টাইগার তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তা ছাড়া বনদস্যুদের হাতে ধরা খেলে চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ দিতে হবে। না দিলে তারা আপনের মাথার খুলি দিয়ে লুডু খেলবে, এইটা নিশ্চিত।’
‘সর্বনাশ! তাইলে উপায়?’
কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকার পর অভি বলে, ‘গ্রামে চইলা যান।’
মফিজ সাহেব আপত্তি জানালেন। বললেন, ওরে বাপরে! গ্রাম এখন ‘শান্তির নীড়’ নাই। আগে যে ভিলেজ পলিটিক্স এনালগ সিস্টেমে হইতো, এখন সেইটা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়। শোন, কয়েকদিন আগে বেদে সম্প্রদায়রে লইয়া একটা টেলিফিল্ম দেখলাম। বাইদ্যাদের ওয়াটার-লাইফ দেইখা আমি অভিভূত হইছি। রাজধানীর আশপাশের একটা নদীতে জলটুঙ্গি নির্মাণ কইরা সেইখানে বাকি জীবন কাটাইলে কেমন হয়?’
‘মামা, টেলিভিশনে দেখা চিত্রের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া দুষ্কর। আপনি সরেজমিনে গেলে দেখতে পাবেন-তুরাগের পানি আলকাতরার মতো। বুড়িগঙ্গার পানি পোড়া মবিলের মতো। আর শীতলক্ষ্যারে মনে হবে কচুরিপানার জঙ্গল। এ রকম পরিবেশে বাস করা কি সম্ভব? আপনে বরং বঙ্গোপসাগরে চইলা যান। সাগরের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে।’
‘কিন্তু সেইখানে তো জলদস্যুদের ভয়ংকর উৎপাত। তারা আমারে খুন কইরা লাশ সাগরে ভাসাইয়া দিলে কে দেখবে? মরহুম হওয়ার পর একমুঠো মাটি পাবো না, এইটা মাইনা নেওয়া কষ্টকর।’
শুধু বিপদ নয়, যাকে বলে মহাবিপদ; মফিজ সাহেবকে নিয়ে হয়েছে সেই দশা। উঁচুস্বরে অভি বললো, ‘মামা, আপনে যেভাবে শান্তি অন্বেষণ করছেন, টেকনাফ থেইকা তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কোথাও তার দেখা পাইবেন না। এ অবস্থায় দু’টা পথ খোলা আছে। এক. আপনে নন্দলাল হইয়া ঘরে বইসা থাকবেন। দুই. দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবীদের মতো দুবাই-মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর-কানাডায় সেকেন্ড হোম নির্মাণ কইরা সেইখানে যাওয়া আশা করবেন। কোনটা করতে চান, ভাইবা দেখেন।’
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ ০১৮৪২২৫৩১২২