শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন

বিষখালী নদীর ভাঙন কবলিত এলাকার চরের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়, হুমকীর মুখে ৩ গ্রাম

বিষখালী নদীর ভাঙন কবলিত এলাকার চরের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়, হুমকীর মুখে ৩ গ্রাম

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

ঝালকাঠির রাজাপুরের দুটি ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য বিষখালী নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে নদীর তীরবর্তী ভঙ্গন কবলিত চল্লিশকাহনিয়া, পালট ও বাদুরতলা গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবসির দাবি, উপজেলার সরকার দলীয় দুই শীর্ষ নেতা ভাটা দুটির মালিকানা থাকায় প্রভাব খাটিয়ে নদীর মাটি কেটে ইট তৈরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাটা দুটি হচ্ছে রাজাপুরের বিষখালীর নদীর তীরে অবস্থিত বড়ইয়া ব্রিকস ও উত্তমপুর ব্রিকস। বছরের ছয় মাস ইট উৎপাদন হয় এ ভাটায়। প্রতিটি ভাটায় ৬ মাসে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে। দুটি ভাটায়ই ইট প্রস্তুতের জন্য বিষখালী নদীর তীরের মাটি ব্যবহার করা হয়। উপজেলার সরকার দলীয় এই দুই নেতার প্রভাবে দুটি ভাটায় সরকারি খাসজমি ও ব্যক্তি মালিকানা জমির মাটি কেটে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। নদী তীরের জমি মালিকেরা ইটভাটার কাছে জমি ভাড়া দেন। জমি ভাড়া নিয়েও সেখান থেকে মাটি উত্তোলন করে ইট প্রস্তুত করা হয়। চল্লিশকাহনিয়া, বাদুরতলা ও বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামের ১০টি স্থান থেকে ইটভাটার জন্য মাটি কাটা হয়। প্রতি শতাংশ জমি ৫ হাজার টাকা করে ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ার জন্য ওই জমি ভাড়া নেয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিষখালী নদীর চল্লিশকাহনিয়া লঞ্চঘাট এলাকা, বাদুলতলা ও বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বিষখালী নদীর পড়ে শ্রমিকরা মাটি কেটে ট্রলার ভরছে। মাটি কাটার ফলে নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্ত হয়েছে। এর প্রভাবে নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মাটিকাটার শ্রমিক রমজান আলী বলেন, আমরা দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে মাটি কাটি। ভাটা মালিকদের নির্দেশে নদী পড়ের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরীর জন্য মজুদ করি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমির মালিক বলেন, নদীর তীরের জমি সব সময় ভাঙনের আশঙ্কা থাকে। তাই কিছু টাকা পাওয়ার আশায় জমির মাটি বিক্রি করেছি। আগামী বর্ষায় পলি পড়ে ওই স্থান আবার ভরে যাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অভিবাবক ফেরদৌস হাওলাদার বলেন, রাজাপুরে বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতিমধ্যেই ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের কয়েকটি কক্ষ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনো সময় হারিয়ে যাবে পুরো স্কুল এবং স্কুলের পাশে থাকা জামে মসজিদ। এছাড়া বাদুরতলা-পুখরীজানা , মানকি সুন্দর সড়ক ও বাদুরতলা-চল্লিশকাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙ্গনের মধ্যে ইটের ভাটায় নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিলে ভাঙ্গন আরও তরান্বিত হবে। পালট গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, খুব সকাল বেলা নদীর তীর থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। গভীর করে নদীর তীর থেকে মাটি কাটার কারণে আশপাশের জমি ও স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে আছে। এ বিষয়ে ভাটার মালিকরা জানান, মাটি ছাড়া ইট উৎপাদন সম্ভব নয়। আমরা ক্রয় করা জমি থেকে মাটি কেটে ইটের ভাটায় ব্যবহার করছি। তবে ঠিক নদীর পাড় থেকে মাটি কাটা হয়না। রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বিষখালী নদীর তীর থেকে মাটি কাটায় উত্তমপুর ব্রীকসকে জরিমানা করেছি। এরপরেও বিষখালী নদীর মাটিকাটা বন্ধ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভাটা বন্ধসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana