মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এরপর দুই দফায় নকশা বদলে ভবনটি ছয়তলা থেকে নবম তলার অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে নির্মাণ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে তিন দফায়।
প্রথম দফায় প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। তবে এখনো নির্মাণসহ সাজসজ্জার অধিকাংশ কাজ বাকি।
চার বছর আগে ২০১৮ সালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরু থেকেই কচ্ছপ গতিতে চলে নির্মাণকাজ। মাঝে নানা অজুহাতে কয়েক দফায় কাজ বন্ধও রেখেছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
ভবনের প্রথম দরপত্র ছিল ছয়তলা পর্যন্ত। আর এতে বরাদ্দ ছিল ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পরে একই কাজের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪০ কোটি টাকা করা হয়। প্রথম ধাপের কাজের প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বিল এরই মধ্যে তুলে নিয়েছে বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জিএম কনস্ট্রাকশন। কিন্তু ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত ভেতরের দরজা, জানালা, ইলেকট্রিক, পানির লাইন স্থাপন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক কাজের অধিকাংশই বাকি।
কাজের ধীরগতির মধ্যেই গত বছর আরও তিনতলা বাড়িয়ে ভবনের নবম তলা পর্যন্ত নকশা ও বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলার কাজের জন্য আরও ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত অষ্টম তলার ছাদ ঢালাই দেয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও একতলার নির্মাণকাজ।
ঝালকাঠি গণপূর্ত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানায়, আগামী ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। সময় এবং বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ সময়ের মধ্যে ভবনের সব কাজ শেষ করে ভবন হস্তান্তর করতে হবে ঠিকাদারকে।
জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না তা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিএম কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মাওলা ফরহাদের সঙ্গে। তবে তিনি মুঠোফোনের কল রিসিভ করেননি।
আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রকল্প প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, করোনা মহামারির সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী এবং শ্রমিকসংকটও ছিল। এ কারণে কাজের গতি ছিল কম।
প্রথম দরপত্রের ৩৫ কোটি টাকা উত্তোলন করার কথা স্বীকার করেন হুমায়ুন কবির। বলেন, ‘সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলার কাজের জন্য দ্বিতীয় টেন্ডারে বরাদ্দের ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার একটি টাকাও বিল পাইনি। কিন্তু সাত কোটি টাকা ব্যয় করেছি। তাই আমাদের অর্থসংকট রয়েছে। আর এ কারণেই কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছি।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। এর মধ্যে হাসপাতাল ভবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে কি না, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। ফলে ঝালকাঠিবাসীকে উন্নত চিকিৎসাসেবা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছুদিন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলে আড়াই’শ শয্যার সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত। সেবার মানও বৃদ্ধি পেত। এখন তো ডাক্তার কম, রোগীর চাপ বেশি, তাই সেবা পেতে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বর্তমানে ২৫০ শয্যা ভবনের কাজ শেষ হওয়া দরকার। গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ২৫০ শয্যার জন্য জনবল নিয়োগ দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, ‘প্রথম দরপত্রের কাজ প্রায়ই সমাপ্ত। দ্বিতীয় দরপত্রের কাজের অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে জোর তাগিদ দিয়েছি।
ফয়সাল আলম বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি পাঁচতলা ভিতবিশিষ্ট সার্ভিস ভবন, অগ্নিনির্বাপক পাইপলাইন ও চারটি লিফট স্থাপনের জন্য যাবতীয় কাজ চলমান আছে।