বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় অবশেষে সেই ক্ষমতাধর ও বিতকির্ত প্রধান শিক্ষক সাহারুম মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিভাগীয় শিক্ষা অধিদপ্তর। তিনি উপজেলার ৮৯ নং উত্তর বাঁশবুনিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-উপ-পরি/ প্রাশিঅ/ বরি/ প্রশা/ ২/৪১১/ ২৪/২৭৭) স্মারকে এক চিঠিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সরকারি চাকুরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সরকারি চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত কালে তিনি বিধিমোতাবেক খোরাকী ভাতা প্রাপ্য হবেন।
আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের খবরটি জানাজানি হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.আমিনুল ইসলাম।
বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন-ভাতা উত্তোলন, একই অর্থ বছরে পরপর তিনটি শ্রান্তি বিনোদন ভাতা গ্রহন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের সাথে অশোভন আচারণ, উপজেলা দক্ষিন চেঁচরী গ্রামের মো. হুমায়ুন কবির ওরফে সিদ্দিক জমাদ্দারের ছেলে ইমরান হোসেন রিমনকে চাকুরি দেওয়ার নাম করে প্রত্যারনা করে ৪ লক্ষ টাকা এবং পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের লাকি জমাদ্দারের নিকট ৫লক্ষ টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেয়া, টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রি করার কথা বলে উপজেলার মহিষকান্দি গ্রামের জালাল হাওলাদার নামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধির নিকট থেকে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া। বাঁশবুনিয়া গ্রামের মিনতি রানীর নিকট জমি বন্ধক রেখে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে সেই জমি ভোগ দখলে না দেওয়াসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা ।
তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন সরেজমিনে তদন্ত করেন। অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয় ওই শিক্ষক।
এছাড়াও সোনালী ব্যাংক থেকে দশ লক্ষ টাকা, রুপালী ব্যাংক ১৫ লক্ষ টাকা, আমুয়া অগ্রণী ব্যাংক আড়াই লক্ষ টাকা এবং স্থানীয় এনজিও আমানত থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেনা, বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে সুদে টাকা এনে ফেরত দিচ্ছেনা।
এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংক কাঠালিয়া শাখা ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে সাহারুম মিয়ার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন।
উপজেলার আবদুস ছোমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম সাইদুর রহমানের মেয়ে ও অন্যের স্ত্রী ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক ছনিয়া আক্তারকে ফুসলিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্ধ হলে সাহারুমকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয় ছনিয়ার আতœীয়রা।
সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো.মানসুর আহম্মেদ জানান, আমাদের ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা হয়েছে। মামলটি চলমান।
ভুক্তভোগী আবুল খায়ের লাকি জমাদ্দার জানান, টাকা চাইলে, কখনও সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি শাহজাহান ওমর আবার কখনও বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ভয় দেখাতো এবং মিথ্যা মামলার হুমকি দিতেন।
এ ব্যাপারে সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মো. সাহারুম মাস্টারের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন (০১৭১৪-৬১৮২০৪) একাধিবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তিনি যা করেছেন, তা কোন শিক্ষকদের কাজ না। তার কর্মকান্ডে সকল শিক্ষক সমাজ হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। সাহারুম মিয়া একজন শিক্ষক নামের কলঙ্ক।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.আমিনুল ইসলাম বলেন, সাহারুম মাস্টারের আচার আচরণ মোটেই শিক্ষক সুলভ নয়। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.জহিরুল ইসলাম জানান, ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল ফাকি, শিক্ষা অফিসারসহ সহকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ, ব্যাংক এনজিও ও বিভিন্ন জনের নিকট থেকে অর্থ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ আছে। শুনেছি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।