শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

কাঠালিয়ায় হাতুরে দন্ত চিকিৎসক শিবুর বিরুদ্ধে এক স্কুল শিক্ষিকা’কে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

কাঠালিয়ায় হাতুরে দন্ত চিকিৎসক শিবুর বিরুদ্ধে এক স্কুল শিক্ষিকা’কে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

বার্তা ডেস্ক:

ঝালকাঠির কাঠালিয়া বন্দরের সাব-রেজিস্ট্রি রোডের হাতুরে দন্ত চিকিৎসক শিবানন্দ শিবুর (শিবু শীল) বিরুদ্ধে এক স্কুল শিক্ষিকাকে ভুল চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুল চিকিৎসার শিকার গুরুতর অসুস্থ ওই স্কুল শিক্ষিকা গত এক সপ্তাহেও শংকামুক্ত হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শিবানন্দ শিবু কোন ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডাঃ লিখে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। গ্রামের অসহায় ও সহজ-সরল মানুষের চিকিৎসার নামে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি এক সময় নরসুন্দর পেশায় কাজ করেতেন। পরবর্তীতে দাঁতের চিকিৎসা লাভজনক হওয়ায় তিনি একাডেমিক, বিডিএস ডিগ্রী অর্জন ও দন্ত চিকিৎসার কোন লেখাপড়া ছাড়াই শুরু করেন দন্ত চিকিৎসা। তার নামের পূর্বে “ডাঃ শিবানন্দ শিবু” ও ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল টেকনোলজি, ঢাকা প্যাড, সাইন বোড ও ব্যানার ব্যবহার করে চেম্বার সাজিয়ে দাঁতের চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছেন। এতে রোগীরা তার কাছ থেকে রোগমুক্ত না হয়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।

ভুল চিকিৎসার শিকার ভূক্তোভোগী স্কুল শিক্ষিকা প্রতিভা রানী জানান, গত ২৯ এপ্রিল আমার একটি দাঁতে ক্যাপ বসানোর জন্য বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ারে ডাঃ শিবানন্দ শিবু’র কাছে যাই। তিনি ক্যাপ বসিয়ে দিলে কয়েকদিন পরে সেটা খুলে যায়। তখন আবার তার কাছে গেলে সে একটি ইনজেকশন দেন এবং আমার দাঁতে সার্জারি করেন। পরে প্রেসক্রিপশনে ওষুধ দিখে লিখে দেন। তার দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পরে আমি মারাত্বকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার সমস্ত শরীরে জ্বালা-পোড়া শুরু হয়, বিভিন্ন স্থানে কালো বড় বড় ঠোসকা উঠে যায় এবং কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে আমার শারীরিক অবস্থা বেশি অবনতি হলে পরিবারের লোকজন আমাকে অন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তিনি জানান ভ‚ল ওষুধ ও ইনজেকশন দেয়ার জন্য এ অবস্থা হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি শিবু কোন ডাক্তারই না। তথচ নামের সামনে ডাঃ লিখে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তাই আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তার বিচারসহ সে যাতে চিকিৎসার নামে কারো ক্ষতি করতে না পারে তার কাঠোর ব্যবস্থার দাবি করছি।

ভ‚ক্তভোগী ওই শিক্ষিকার স্বামী মিলন সিকদার বলেন, আমার স্ত্রী বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ারে শিবানন্দ শিবু চেম্বারে যায় তার একটি দাঁতে ক্যাপ বসানোর জন্য। কিন্তু ক্যাপ বসানোর নামে তার দাঁতে কয়েকটি সার্জারি করেন শিবানন্দ শিবু। এতে তার দাঁেত প্রচন্ড ব্যাথা হয়। পরে পুনরায় তার কাছে গেলে রোগীর শরীরে একটি ইনজেকশন পুস করে এবং প্রেসক্রিপশনে বিভিন্ন রকেমের ওষুধ লিখে দেন। বাসায় আসার পরে আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং সমস্ত গায়ে জ্বালা যন্ত্রণাসহ কালো কালো ঠোসকা উঠে যায়। এরপর তাকে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি জানান উল্টা পাল্টা ওষুধের কারণে তার এরকমের হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পাড়ি শিবু কোন ডাক্তারই নয়। তিনি মূলত একজন নাপিত (নরসুন্দর) ছিলেন। কিভাবে তিনি ডাক্তার হলেন তা আমার ভোদগম্য নয়। তাই আমি প্রশাসনের কাছে এই ভূয়া ডাক্তারের কঠোর বিচার চাই।

শিবানন্দ শিবু বড় ভাই বাবুল চন্দ্র শীল জানান, আমাদের তিন ভাইদের মধ্যে শিবু শীল সবার ছোট। ওকে তিন বছরের রেখে মা মারা যায়। এরপর আমি ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করি এবং শৌলজালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়াই। ৩/৪ বার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে। পরে আমার বেতাগী বন্দরে সেলুনের দোকানে তাকে ৫/৭ বছর কাজ শিখানোর পর অন্য একটি দোকানে কাজ করতো। শিবানন্দ শিবু বর্তমানে যে দন্ত চিকিৎসাক সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, শিবু কোথাও ডাক্তারি পড়ে নাই। আমাদের সেলুনের পাশে আলম ডেন্টাল কেয়ার নামে একটি দোকান ছিলো। কাজ না থাকলে শিবু সেখানে গিয়ে বসতো এবং তাদের কাজ দেখতো। পরে কাঠালিয়া বন্দরে গিয়ে একটি দাঁতের চেম্বার দেয় এবং নিজেই রোগী দেখেন।

শিবানন্দ শিবুর বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী মো. ওবায়দুর রহমান, আব্দুল কাদের ও এনায়েত জানান, ১৯৯১ সনে শৌলজালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আমাদের সাথে শিবু এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একাধিক বিষয়ে ফেল করে। এরপর ৩/৪ বার পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেনি। এমনকি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোন ক্লাসেই সে ২/৩ বিষয়ের বেশি পাশ করতে পারে নায়। কিন্তু শিবু এখন দাঁতের ডাক্তার শুনে আমরা খুবই আশ্চর্য হই।

এ বিষয়ে বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ারের স্বত্বাধিকারী শিবানন্দ শিবু বলেন, স্কুল শিক্ষিকা প্রতিভা রানী দাঁতের সমস্যার জন্য আসলে আমি তার দাঁতের চিকিৎসা (রুট ক্যানেল) শুরু করি এবং পাঁচ দিনের এন্টিভায়োটিক দেই। ৬ দিন পর আবার আসেন। রুট ক্যানেল করলেতো ৪/৫ বার আসা লাগে। ওষুধে কোন সমস্যা হবে না যদি জ্বর হয় তাহলে একটা নাপা র‌্যাপিড খাওয়ার পরামর্শ দেন। অবস ও ব্যাথা কমানোর জন্য লোকাল ও টোরাক ইনজেকশন দেই এবং পরে দাঁত তুলি। ব্যাথার সময় কিছু করা যায না। মূলত “ড্রাগ রিঅ্যাকশন” হয়েছে। নামের পূর্বে ডাঃ লেখার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা আমি লিখি নাই, কোম্পানীর লোকেরা প্যাড তৈরি করে দিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তাপস কুমার তালুকদার বলেন, কোন বিডিএস ডিগ্রী অর্জন ব্যতীত দন্ত চিকিৎসকরা ডাঃ লিখতে পারবেন না। সাধারণ রোগীদের সচেতন হওয়াসহ হাতুরে ডাক্তারের কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডাঃ এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ভূক্তোভোগীরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয় হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ 01774937755 অথবা ই-মেইল: kathaliabarta.com












All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana