শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

‘বিনা তেলে রান্না শিখতে চাই, সুযোগ থাকলে জানাবেন’

‘বিনা তেলে রান্না শিখতে চাই, সুযোগ থাকলে জানাবেন’

অনলাইন ডেস্ক:

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আহসানুল হক। স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের দুই কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। স্বামী-স্ত্রী দুজনে চাকরি করেও পরিবারের ব্যয় সামলাতে বিপাকে পড়েছেন আহসান দম্পতি। তিনি বলেন, সব খাতেই খরচ বেড়েছে। সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছে। খরচ কমাতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিতে হচ্ছে, যেগুলো আগে কখনো ভাবনাতেও আনেননি।

কী ধরনের কৌশল জানতে চাইলে তিনি বলেন, সস্তা দামের তরকারি কেনা, তরকারিতে তেল কম দেওয়া, বাইরে চা পান ছেড়ে দেওয়া, রিকশার বদলে হেঁটে চলাচল করা, মুঠোফোনের খরচ কমিয়ে আনা।

ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ি, ঠাকুরগাঁও রোড ও পুরোনো বাসস্ট্যান্ড বাজারের মুদি ও সবজির দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এক কেজি বেগুন ছিল ২০ টাকা। সেই বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। টমেটো ১৫ থেকে বেড়ে ২৫ টাকা, ফুলকপি ১৫ থেকে বেড়ে ২৫ টাকা, পেঁয়াজ (দেশি) ৪০ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ (ভারতীয়) ৩৫ থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা, শিমের দাম প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম ১২-১৫ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে বেড়ে হয়েছে ১৪ থেকে ১৮ টাকা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৯০ টাকার মসুর ডাল বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা, চিনি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, শর্ষের তেল ১৮০ টাকা থেকে ২১০ টাকা, জিরা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, আটা ৩৫ থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬২০–৬৫০ টাকা। বাড়তি এই খরচ মেটাতে গিয়ে সীমিত আয়ের অনেক মানুষ নানা উপায় বেছে নিয়েছেন।

কালীবাড়িতে বাজার করতে এসেছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সীমিত আয়ে আমার সংসার চলে। রমজানের আগেই সব জিনিসের দাম বেড়ে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ দামে আমার মতো মানুষের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই কম করে জিনিস কিনছি।’

শহরের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন নরেশ রায়। তাঁর ছেলে-মেয়ে পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। নিজের সংসারের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সামান্য বেতন দিয়ে খুবই কষ্টে এত দিন সংসার চালিয়ে এসেছি। এখন আবার সব জিনিসের দাম বাড়তি। এ অবস্থায় সমাপনী পরীক্ষার্থী ছেলের টিউশনি কমিয়ে দিয়েছি। এটা না করলে জীবন চলবে কী করে?’

হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার পর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বাজারে কম দামি মাছ ও সবজি কিনছেন পরিবারের জন্য। অনন্যোপায় না হলে দাওয়াত বাড়িতেও যাচ্ছেন না।

অন্যান্য পণ্যের মতো গ্যাস ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলেজপাড়া মহল্লার বাসিন্দা রুবি আকতার। তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম তো বেড়েছেই। তার ওপর গ্যাস ও সয়াবিন তেলের দাম আকাশছোঁয়া। বাড়তি দামে সয়াবিন তেল কিনে খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বিনা তেলে তরকারি রান্না শিখতে চাই। এটার সুযোগ থাকলে আমাকে একটু জানাবেন।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম বলেন, সম্প্রতি চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বেড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন গড়পড়তা আয়ের মানুষেরা। তাঁর নিজের অবস্থাও অন্যদের মতোই বলে জানান তিনি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদি বলেন, অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে।

 

সূত্র: প্রথম আলো
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana