রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

রাজাপুরে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গুত্বের পথে শাহিনুর

রাজাপুরে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গুত্বের পথে শাহিনুর

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরে বেসরকারী সোহাগ ক্লিনিক নামের একটি প্রতিষ্ঠান তিনি রোগী দেখেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) আজম খান। ডাক্তার পরিচয়দানকারী আজম খানের ভুল চিকিৎসায় পঙ্গুত্ব জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ৩৯ বছর বয়সী শাহিনুর বেগম নামের এই নারী।
রাজাপুর উপজেলার পুখরিজানা গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক আফজাল মোল্লার স্ত্রী শাহিনুর বেগম বর্তমানে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন। আজম খান কতৃক তার পায়ে পুশ করা ইনজেকশনের পার্শপ্রতিকৃয়ায় ঐ পা এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান শহিনুরের স্বামী ও স্বজনরা।
শাহিনুর বেগমের পরিবার জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাই মাসে হাটু ও পায়ের পাতায় ব্যাথা অনুভব হলে রাজাপুরে একটি ক্লিনিকে ডাক্তারের শ্বরণাপন্ন হন। সেখানে ডাক্তার পরিচয়দানকারী স্যাকমো আজম খান তাকে দেখেন এবং চিকিৎসার পরামর্শ দেয়।
পরবর্তীতে স্টেরয়েড নামক ৪ টি ইনজেকশন পর পর ২ সপ্তাহে শাহিনুর বেগমের পায়ে পুশ করে দেন আজম খান নিজেই। এরপর আস্তে আস্তে তার দুই পা ফুলে উঠে এবং যন্ত্রনা বাড়তে থাকে।
ঘটনার ১ মাস পরে স্বজনদের পরামর্শে ঝালকাঠিতে গিয়ে অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফেরদৌস রায়হানকে দেখান শাহিনুর। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এই ডাক্তার শাহিনুরকে বলেন, তার পায়ে ”স্টেরয়েড ইনজেকশন” দেয়ায় ”টেন্ডো এ্যাকাইলিজ” নামক দুইটি রগ ছিড়ে গেছে। ডাক্তার ফেরদৌস রায়হানের পরামর্শে শাহিনুর এবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যান। রাজধানীর ”ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (NITOR)” এ ভর্তিও হন। কিন্তু সেখানে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শাহিনুরের স্বামী আফজাল মোল্লা বলেন, ঢাকার স্যারেরা কইছে ভুল ইনজেকশন দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হইছে। এর চিকিৎসা করাইতে এহন আষ্টো লাখ টাহা লাগবো।
শাহিনুরেরা দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় চিকিৎসা খরচ আট লাখ টাকা শুনে সেখান থেকে নাম কাটিয়ে বাড়িতে চলে আসে।
এবিষয়ে আজমখানের কর্মস্থল ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার সাথে কথা হয় মুঠো ফোনে। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগের বিষয়তো কাগজপত্র না দেখে বলতে পারবো না। তাছাড়া অনেক রোগী বড় বড় ডাক্তার দেখিয়ে ব্যাবস্থাপত্র নিয়ে আসেন, এমনকি ইনজেকশন কিনেও আনেন, আমি শুধু পুশ করে দেই। তবে শাহিনুর নামের রোগীর বিষয়ে না জেনে বা কাগজপত্র না দেখে আমার কোন মন্তব্য করা ঠিক হবেনা।
এদিকে আবারো ফুলে ওঠে শাহিনুরের দুই পা। বাম পায়ে হতে থাকে ইনফ্যাকশন। যন্ত্রনা সইতে না পেরে শাহিনুর এবার ভর্তি হন রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন শাহিনুর বেগমের সাথে সাক্ষাতে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে।
শাহিনুর বলেন, গত কয়েকদিন আগে পাও দুইডা ফুইল্যা গেছে। ব্যাতা সইতে না পাইররা পয়লা ফেব্রুয়ারি এই হাসপাতালে ভর্তি অইছি।
স্টেরয়েড ইনজেশন দেয়ায় দু’পায়ের টেন্ডো এ্যাকাইলিজ নামক দুইটি রগ ছিড়ে গেছে।রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: আবুল খায়ের রাসেল বলেন, স্যাকমো আজম খান কোন ডাক্তার নন, তবুও সে (আজম খান) রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে প্রতিদিন চেম্বর করেন। বিষয়টি উর্ধত্বন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা: শিহাব উদ্দিন বলেন, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) কিভাবে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। এটা কোনো ভাবেই রোগীকে পুশ করার ক্ষমতা সে রাখেনা। এটা পুশ করতে হলে সুপার স্পেশালিষ্টের প্রয়োজন হবে। স্যাকমো আজম খান যেটা করেছে তা অপরাধ।
সিভিল সার্জন আরো বলেন, বিষয়টি আমি মৌখিক ভাবে শুনেছি। রোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগপত্র পেলেই তদন্ত কমিটি করে, পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ ০১৮৪২২৫৩১২২












All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana