মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন

দেশজুড়ে আলোচিত ঝালকাঠির সেই লিমনের বিয়ে

দেশজুড়ে আলোচিত ঝালকাঠির সেই লিমনের বিয়ে

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের পা হারানো সেই কিশোর এখন সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের সহকারী প্রভাষক। বিয়ে করে এখন তিনি সংসার জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। কনে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওপাড়া এলাকার রাবেয়া বসরী। যশোরে কনে বাড়িতেই শুক্রবার তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান।
১০ বছর আগে র‌্যাবের গুলিতে পা হারিয়েছিলেন লিমন হোসেন। তখন তার বয়স ছিল ১৬। সে বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয় র‍্যাবের অভিযান।
লিমন হোসেন জানান, ‘র‌্যাব আমাকে যখন গুলি করেছে, তখনও আমি জানি না কেন তারা আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। পরে শুনেছি তারা অন্য একজনকে ভেবে ভুলে আমার পায়ে গুলি করেছে। ‘ডাক্তাররা আমার একটি পা যেদিন কেটে ফেলেছে, সেদিন থেকেই আমি হাল ছাড়িনি। কখনও ভাবিনি আমি পঙ্গু।’
পা হারিয়েও ভেঙে না পরে লিমন চালিয়ে নিয়েছেন পড়াশোনা, গড়েছেন ক্যারিয়ার। তিনি বলেন, ‘সবসময় গরীব বাবা-মাকে সাহস দিয়েছি, মানুষের সহযোগিতায় পড়াশুনা করেছি। আজ আমি সাবলম্বী, আমার এই জীবন যুদ্ধের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান মানবাধিকার সংগঠন এবং মিডিয়া অঙ্গনের। আমি মানবাধিকারকর্মী এবং মিডিয়া কর্মীদের প্রতি চিরঋনি।’
লিমন আরও জানালেন, পরিবারের ইচ্ছায় বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে এবার জীবনে আরেকধাপ এগিয়ে যেতে চান তিনি। তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার।
তার হবু স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে কথা হয় হলে। তিনি বলেন, ‘যে (লিমন) নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন, দাম্পত্য জীবনেও তিনি দায়িত্বশীল হবেন এটা বুঝেই আমি এ বিয়েতে রাজী হয়েছি।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে লিমনের পায়ে গুলি করেন র‍্যাব সদস্যরা। এরপর লিমনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধা ও অস্ত্র আইনে দুইটি মামলা করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমনের গুলিবিদ্ধ পা কেটে ফেলতে হয় ঘটনার তিন দিন পর।
সে বছরই লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ঝালকাঠি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাঠে মায়ের সঙ্গে গরু আনতে গিয়েছিলেন লিমন হোসেন। এ সময় তিনটা মোটরসাইকেলযোগে ছয়জন র‌্যাব সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। পরে লুৎফর রহমান নামে এক র‌্যাব সদস্য লিমনের শার্টের কলার ধরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেন। তখন লিমন তার পা ধরে কেঁদে বলেন, ‘আমি সন্ত্রাসী না, আমি স্টুডেন্ট। পাশের ইটভাটায় আমি কাজ করি। খেয়া পার হয়ে স্কুলে যাই।’ তখন লুৎফর রহমান লিমনের মাথায় গুলি না করে পায়ে গুলি করেন।
র‍্যাবের মামলা যখন চলে, তখন ঝালকাঠির কারা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় পড়াশোনা চালিয়ে যান লিমন। জামিনে মুক্ত হয়ে ২০১৩ সালে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন লিমন। পরের বছর মামলা দুটি থেকে লিমনকে বাদ দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এল এল বি ডিগ্রি নিয়ে আইনি সহায়তা প্রদানকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টে (বি.এল.এ.এস.টি) চাকরিও করেন তিনি।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল এম ডিগ্রি নিয়ে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষা সহকারী পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সহকারী প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি হয় লিমনের। তবে, লিমনের মায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১০ বছরেও জমা দেয়নি তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
পা হারানোর সেই দুর্বিষহ দিন পেরিয়ে ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুদ্ধে গর্বিত লিমনের বাবা-মা। ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তারা।
তার বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন “পোলাডাতো মইররাই গ্যাললে, আল্লায় বাচাইয়া রাখছেন আজ আমি আল্লার কাছে শুকরিয়া জানাই”।
লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বলেন, “গত ১০ বছরে যতো কষ্ট হরছি সব কষ্ট শ্যশ হইয়া গেছে আইজ পোলার বিয়ায়। কোনো দিন ভাবিনাই মোর পোলা লিমন কলেজের মাষ্টার অইবে। বৌডার লইগ্যা আমনেরাও (সাংবাদিক) দোয়া হইররেন। ওরা যেনো সুখী অইতে পারে’।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana