সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন

খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কাঠালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কাঠালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সাকিবুজ্জামান সবুর:

ঝালকাঠির কাঠালিয়া দু’লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলায় একটিমাত্র সরকারি হাসপাতাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (আমুয়া) নামেই হাসপাতাল।

বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসকসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩৮টি পদে জনবল না থাকা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ৮-১০ বছর ধরে ব্যবহার না করা ও অযন্ত-অবহেলার কারণে হাপাতালের কোটি কোটি টাকার অত্যাধুনিক দুটি এক্সে মেশিন (ডিজিটাল), একটি ইসিজি ও প্যাথলোজী ল্যাবের বিভিন্ন মেশিন-যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালটি নিজেই এখন দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভূগছে।

১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫৮বছরের পুরানো ৩১শয্যার (৫০শয্যায় উন্নীত, তবে জনবল ৩১ শয্যার) এ হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, কনসালটেস্ট, চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিষ্ট, ষ্টোরকিপার ওয়ার্ডবয়, আয়া, গার্ড ও পরিচ্ছন্নকর্মীসহ ৩৮টি পদ শূন্য। অত্যাধুনিক ভবন, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, সুসজ্জিত ওটিসহ প্রয়োজনীয় এক্সে ও প্যাথলজিক্যাল সরঞ্জমাদির সুবিধা থাকা সত্বেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে জনবলের অভাবে মেজর সার্জারী (অপরারেশ), এক্সে ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত এ উপজেলাবাসী।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসার, গাইনী ও ৪টি গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালটেন্টসহ ১১টি চিকিৎসকের পদই শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তাসহ কর্মরত আছেন মাত্র ৫জন। দু’টি সহকারী মেডিকেল অফিসারের একটি এবং ২৩জন নার্সের মধ্যে শূন্য ৬টি। বরাদ্ধকৃত পদের সবই শুন্য- পরিসংখ্যানবিদ-১,ফার্মাসিস্টে-৪, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ২টি, জুনিয়ার মেকানিক-১, স্টোর কিপার-১টি এবং আয়া-২টি ও কুক (বাবুর্চি)- ২টি। এছাড়া ৩টি ওয়ার্ড বয়ের আছে একজন, অফিস সহকারী ৩টি পদের দুটিই শুন্য। এমএলএসএস ৩টি পদের ১টি, গার্ড ২টি পদের ১টি ও সুইপার ৫টি পদের ২টি পদ কয়েক বছর যাবৎ শূন্য।

সরেজমিন গিয়ে ও তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ২০১৪ সালের ১২মে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলোজিস্ট) সুমন বেপারী মারা যাওয়ায় পদটি শুন্য হয়। এরপর অন্যকোন টেকনোলজিস্ট এ হাসপতালে যোগদান না করায় দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এ হাসপাতালে এক্সে হয় না। এক্সের রুমটি ওই থেকে তালাব্ধ রয়েছে। বছরের পর বছর ব্যবহার না করায় কারণে অত্যাধুনিক দুটি ডিজিটাল এক্সে মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্যাথালোজী ল্যাবের অবস্থা আরো করুন। দুটি প্যাথালোজিস্ট পদের দুটোই বিগত ২০১২ সন থেকে শুন্য। ওই থেকে এ ল্যাবেও কেহ যোগদান করেনি। প্যাথালোজী ল্যাবটিও বিগত ৯বছর ধরে তালাবন্ধ।

অপরদিকে অনেক বছর পর ২০১৯ সনের শেষের দিকে হাসপাতালে একজন ডেন্টাল সার্জন যোগদান করলেও দন্ত রোগী দেখার চেয়ারসহ কোন ইকুভমেন্ট না থাকায় এক বছরের অধিক সময় ধরে এ চিকিৎসক নাম মাত্র সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

রোগীদের অভিযোগ, এ হাসপাতালে ডাক্তার সংকট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার লোকজন না থাকায় বাধ্য হয়ে আমারা (রোগীরা) কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্র্তী উপজেলা ভান্ডারিয়া, রাজাপুর, বেতাগী, ঝালকাঠি সদর ও বরিশালের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করে চিকিৎসা নিচ্ছি। এ হাসপাতাল নামেই হাসপাতাল। এখানে আসলে সময়মত ডাক্তার পাওয়া যায় না। আর সব টেস্টই বাহির থেকে করাতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তাপস কুমার তালুকদার বলেন, ১৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে আমিসহ ৫জন আছি। এছাড়া ৩৩ কর্মচারীর মধ্যে ২৮টিই দীর্ঘদিন ধরে খালী। জনবল সংকটের কারণে সেবা দেয়ার মানসিকতা থাকা সত্বেও পারছি না। বিশেষ করে কনসালটেন্ট না থাকায় হাসপাতালে কোন মেজর অপারেশন করা যাচ্ছে না, যা খুবই জরুরী। এছাড়া মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও এবং প্যাথালোজী) পদ ৮-৯ বছর ধরে শুন্য। ব্যবহারের অভাবে এক্সে মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত লিখেও কোন জনবল পাচ্ছি না, এমনকি আয়া, গার্ড ও পরিচ্ছন্ন কর্মীও।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana