রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন
সাকিবুজ্জামান সবুর:
ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া (তালতলা বাজার) সংলগ্ন অরক্ষিত বধ্যভ‚মির সীমানা প্রাচীর (বাঁশ, কাঠ ও নেট দিয়ে) করে দিলো বসুন্ধরা শুভসংঘ। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিনবর বধ্যভ‚মিটির সীমানা প্রাচীর তৈরি করে দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা। এতে সহয়তা করেন গণহত্যায় নিহতদের স্বজনরাও।
বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম, সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক হোসেন খানের উপস্থিতিতে বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি মো. সাকিবুজ্জামান সবুরের নেতৃত্বে এ কাজ সম্পন্ন হয়। কাজে অংশনেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. সিয়াম হোসাইন, সহসভাপতি মো. সোহাগ মুন্সী, শিক্ষা ও পাঠ্য চক্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রবিউল, প্রচার সম্পাদক মোঃ নাইম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান, মো. রহিম, দপ্তর সম্পাদক মো. রফিক, অর্থ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রিফাতুল ইসলাম রাতুল, মো. রায়হান, মো. সোলায়মান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাসিবসহ অন্যান্য সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫শে মে রোজ বুধবার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সহয়তায় দিনবর আমুয়া, বাঁশবুনিয়া, ছোনাউটা এলাকায় চারিদিক থেকে বেরিকেট দিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে নিরীহ শান্তিকামী ৩৯জনকে ধরে এনে তালতলা বাজারের পূর্ব পাশে বাঁশবুনিয়া হাই স্কুলের সামনে ভাড়ানি খালের পাড়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে বাঁশবুনিয়া গ্রামের ৩০জন, আমুয়া গ্রামের ৮জন এবং ছোনাউটা গ্রামের ১জন। আমুয়া ইউনিয়ন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও অনেক গণ কবর।
নিহতরা হলেন, দেবেন্দ্রনাথ দাস রায়, হরেন্দ্রনাথ দাস রায়, সুকুমার দত্ত, অম্বিকা চরণ নাথ, সম্ভু চরণ নাথ, বাবু রাম মালাকার, সূর্যকান্ত মন্ডল, কালি কান্ত মন্ডল, প্রফুল্ল হালদার, কাশিশ্বর শীল, রাজু শীল, নারায়ন হালদার, কালিকান্ত হালদার, শ্যামল কান্ত হালদার, গনেশ হালদার, মায়া রানী, গঙ্গা চরণ মাঝি, রাম কানাই মিস্ত্রী, কালু বালা, আবুল হাসেম মাঝি, আফজাল হোসেন, আব্দুল বারি হাওলাদার, হাতেম মাঝি, হরেন্দ্র কুমার মিস্ত্রী, জান্টু দাস, মালতী রানী, সূর্যকান্ত মাঝি, তফাজ্জল হোসেন রাজা মিয়া, রমনী চন্দ্র দাস, শিশু কুমার দাস, নিত্যানন্দ রজক দাস, জিতেন্দ্রনাথ, অমূল্য চন্দ্র নাথ, হরি নাথ, সনতন ঠাকুর ও গনেশ চন্দ্র রায়।
নিহতদের স্বজন সুখরঞ্জন দেবনাথ জানান, পাক বাহিনী চলে যাওয়ার পর জঙ্গলে পালিয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া মনোরঞ্জন হালদারসহ আরও কয়েকজন মিলে বেশ কয়েকটি গর্ত করে পাক বাহিনীর হত্যা করে রেখে যাওয়া ১৫/২০ জনকে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
বীরমুক্তিযোদ্ধা নারায়ণ কাঞ্জিলাল বাবুল ঠাকুর জানান, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সেদিনের সে স্মৃতিতে থাকা ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত হওয়া পরিবার গুলো বঙ্গবন্ধুর দেওয়া এক বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৬শ টাকা ছাড়া কিছুই পায়নি শহীদ পরিবারগুলো। দীর্ঘদিন বধ্যভ’মি এলাকায় স্মৃতিফলক নির্মাণ করে শহীদের স্মৃতিটুকু ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন দাবি তুলেছিলেন। যাতে করে বর্তমান ও অনাগত প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এই গণহত্যার ইতিহাস জানতে পারে। এছাড়া নিহতের পরিবারেরা স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে গণকবরে ছোট পরিষরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শাখাওয়াত হোসেন এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে নির্মাণের পর থেকেই বধ্যভূমিটি অরক্ষিত ছিলো। বধ্যভ‚মিটি গোচারণ ভ‚মিতে পরিনত হয়েছিলো। এতোদিন নিহতদের স্বজনরা অরক্ষিত বধ্যভ‚মির প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে বসুন্ধবা শুভসংঘ এ মহৎ কাজটি করে দেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা লক্ষীকান্ত মিস্ত্রী, অভিনাস সন্নমত ও নিহতের স্বজন সমীর মন্ডল, তাপস দে, কমল কান্তি দে জানান, বসুন্ধরা শুভসংঘের এ মহৎ উদ্যোগটি আমাদের প্রাণ ছুয়েছে। তারা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে যে কাজ করেছেন এ জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।