বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের জি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বড় কৈবর্তখালী গ্রামের মৃত মাইনউদ্দিন ফরাজীর ছেলে মো. নূর ফরাজী (৭০) হত্যার ভয়ে এলাকা ছেরে পালিয়ে বেরায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, মৃত মাইনউদ্দিন ফরাজীর দুইটি বিবাহ ছিলো ১ম স্ত্রী ছিলেন মোসাঃ ফুলমনবিবি এবং ২য় স্ত্রী ছিলেন মোসাঃ ছাহেরা বেগম। মাইনউদ্দিন ফরাজী ১৯৯১সালে মৃত্যু বরণ করেন।
প্রথম স্ত্রী ফুলমনবিবির গর্ভে ছঁয় সন্তান জন্মহয় চার ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা হলেন, মো. মহিন উদ্দিন ফরাজী তিনি ২০০৬ সালে ইন্তেকাল করেন পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। আঃ শুক্কুর ফরাজী (৭২) তিনি ৪৬নং গালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন বর্তমানে অবসরে আছেন। মো. নূর ফরাজী (৭০) তিনি জি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বর্তমানে অবসরে আছেন। মো. ইউনুছ ফরাজী (৬৭) তিনি পেশায় একজন কৃষক। ফাতেমা খাতুন (৬৪), ও আয়শা খাতুন (৬০)।
২য় স্ত্রী ছাহেরা বেগমের গর্ভে আট সন্তান জন্মহয় ছঁয় ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা হলেন, মো. নেছার উদ্দিন ফরাজী তিনি সেনাসদস্য ছিলেন বর্তমানে অবসরে আছেন। মো. নাজির ফরাজী তিনি পেশায় একজন পুলিশ বর্তমানে পিরোজপুর সদর থানায় এসআই পদে কর্মরত আছেন।
মো. ওয়ালিউল্লাহ ফরাজী তিনি পেশায় একজন কৃষক। মো. মুছা ফরাজী এবং মো. ইছা ফরাজী দুইজনে বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। মো. নূহু ফরাজী তিনি পেশায় একজন কৃষক। খাদিজা খাতুন ও শাহিদা খাতুন। পিতা মৃত্যু পর থেকে জমিজমা ভাগবন্টন নিয়ে উভয় পক্ষের সাথে দীর্ঘবছর যাবত বাকবিতণ্ড দ্বন্দ্ব চলিতে থাকে। একপর্যায় জমির সিমানা নিয়ে উপভয়ের সাথে মারধরের ঘটনা ঘটে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আঃ শুক্কুর ফরাজী অভিযোগ করে বলেন, আমি ও আমার ছোট ভাই নূর ফরাজী এবং আমার সৎভাইদের নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করি। আমাদের বাড়ির পাশে বাবার আরেকটি জমিতে আমার ছোট ভাই ইউনুছ ফরাজী বসবাস করে। বাবার সম্পত্তি নিয়ে সৎভাইদের সাথে দীর্ঘবছর ধরে দ্বন্দ্ব চলিতে থাকে। এটা নিয়ে অনেক বার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ শালিস বৈঠক করেন কিন্তু আমার সৎভাইদের মনের মতো না হওয়ায় প্রতিবার তারা শালিস মানে না বানচাল করে দেয়।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, এসব কিছু সেনাসদস্য নেছার উদ্দিন ফরাজী ও এসআই নাজির ফরাজী এই দুই ভাইয়ের ক্ষমতার শক্তিতে তারা এমন কাজ করে। দুজনের ইশারায় বাবার সম্পত্তির সিমানা নিয়ে দুই পক্ষের সাথে বাকবিতণ্ড হয় একপর্যায় আমাকে এবং আমার ছোট ভাই নূর ফরাজীকে আমাদের সৎভাই মো. নেছার উদ্দিন ফরাজী, মো. নাজির ফরাজী, মো. ওয়ালিউল্লাহ ফরাজী, মো. নূহু ফরাজী, দুই ভাইকে মারধর করিয়া বাড়ি ছেরে চলে যেতে বলে নয়তো খুন করিবে বলে হুমকি প্রদান করে আমার সৎভাইয়েরা। আমার ছোট ভাই নূর ফরাজীকে অনেক মারধর করায় সে অসুস্থ হয়েপরে। তারা অনেক শক্তিশালী তাদের জোর বল শক্তি ক্ষমতা সব আছে তাদের সাথে আমরা পারবো না। তাই ওইদিন রাতে প্রাণের ভয়ে আমার ছোট ভাই নূর ফরাজী তার স্ত্রী নিয়ে বাড়িঘর এলাকা ছেরে পালিয়ে বরিশালে ছেলের কাছে চলে যায়। আমার থাকার মতো দূরে কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকায় আমি ও আমার স্ত্রী নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ভয়ে ঘরের মধ্যে কোনো রকম দিন কাটাচ্ছি। খাওয়া গোসল নামায সব ঘরের মধ্যে বসে করি বড় ভাইয়ের ছেলে ইসমাইল মাঝে মধ্যে এসে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার করে দিয়ে যায়। বাবার তৈরি করা মসজিদ সেখানে নামায আদায় করতে নিষেধ করে এবং বাড়িঘর এলাকা ছেরে চলেযেতে বলে সৎভাইয়েরা। যদি মসজিদে নামায আদায় করতে যাই তাহলে মারধর এমনকি খুনও করতে পারে। তাই তাদের ভয়ে মসজিদে গিয়েও নামায আদায় করতে পারছি না। আমাকে বলে তোর একভাই গেছে তুই কেন আছো তুইও এলাকা ছেরে চলে যায়। সৎভাইদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে চাই। এজন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর ফরাজী অভিযোগ করেন বলেন, আমি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলাম আমার বড় ভাই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন তাই ছোট সৎভাইদের হাতে লাঞ্ছিত মারধর খেয়েও লোক লজ্জায় কাউকে বলি নাই। বুড়া বয়সে বাবার সম্পত্তি নিয়ে যদি ছোট সৎভাইদের হাতে মার খেতে হয় এর চেয়ে লজ্জার কি আছে। মার খেয়ে প্রাণের ভয়ে বাড়িঘর এলাকা ছেরে বরিশালে ছেলের বাসায় চলে আসছি। বাড়িতে থাকলে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিছে। এরপর নিরুপায় হয়ে বিষয়টি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সৈয়দ সুমন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানাই। এবং তাদেরকে বাবার সম্পত্তি থেকে ভাই বোন সৎমা যে যতটুকু অংশ পায় সবাইকে ভাগবন্টন করে সমাধান করেদিতে বলি। প্রয়োজনে আমাকে ৩ শতাংশ জমি কম দিয়ে হলেও সমাধান করুক। শালিসি মানি না বলে আমাদের দখল জমির সিমানার মধ্যে টয়েলেট, হাস-মুরগি থাকার ঘর এবং রান্নাঘর ভেঙে সৎভাইয়েরা দখল করে বেরা দিয়ে নিয়ে গেছে। এসব কিছু সেনাসদস্য নেছার উদ্দিন ফরাজী ও এসআই নাজির ফরাজী এই দুই ভাইয়ের ক্ষমতায় করেছে।
উভয় পক্ষের নয়জন শালিসগণ দলিলের এস.এ খতিয়ান এবং বি.এস খতিয়ান দাগ অনুযায়ী মৃত মাইনউদ্দিন ফরাজীর সম্পত্তি থেকে ৫১টি প্লট হিসাবে নকশা তৈরি করেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের শাহজাহান মোল্লা, কেওড়া গ্রামের মো. নিজাম ফকির, পুটিয়াখালী গ্রামের আলহাজ আব্দুল মন্নান, অবসরপ্রাপ্ত (ওসি) গালুয়া গ্রামের মো. মনোয়ার হোসেন মিয়া, নৈকাঠি গ্রামের মো. নুর হোসেন হাওলাদার, বড় কৈবর্তখালী গ্রামের (৪নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য সৈয়দ সুমন, বড় কৈবর্তখালী গ্রামের কামাল হোসেন সিকদার, ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের মো. বরকত বেপারী, নিজ গালুয়া গ্রামের মো. সেলিম আকন শালিসগণরা সবাই একত্রিত হয়ে দুই পক্ষ নিয়ে একাধিক বার তাদের নিজ বাড়িতে বসে এস. এ খতিয়ান এবং বি.এস খতিয়ান অনুযায়ী মৃত মাইনউদ্দিন ফরাজীর সম্পত্তি সার্ভেয়ার (আমিন) দ্বারা জমি মাপজোপ দিয়ে দুই পক্ষের ভাই, বোন ও ২য় স্ত্রী মোসাঃ ছাহেরা বেগম সহ যে যতটুকু অংশ পাইছে তাদের নামে একটা মিমাংসা নামা তৈরি করেন।
মিমাংসা নামায় থানা রাজাপুর জে. এল ৩২নং বড় কৈবর্তখালী মৌজার ৯টি এস. এ খতিয়ান অনুযায়ী ওয়ারিশ সূত্রে দুই পক্ষের প্রাপ্য সম্পত্তির পরিমাণ ৫-৪৫.৪৮শতাংশ এর মধ্যে মো. মাহিন উদ্দিন ফরাজী ৩৩.৯০ শতাংশ, আঃ শুক্কুর ফরাজী ৩৩.৯০ শতাংশ, মো. নূর ফরাজী ৩৩.৯০ শতাংশ, মো. ইউনুচ ফরাজী ৩৩.৯০ শতাংশ, মো. নেছার উদ্দিন আহমদ ৪৩.৯৫ শতাংশ, মো নাজির ফরাজী ৪৩.৯৫ শতাংশ, মো. ওয়ালীউল্লাহ ফরাজী ৪৩.৯৫ শতাংশ, মো. মুছা ফরাজী ৪৩.৯৫ শতাংশ, মো. ইছা ফরাজী ৪৩.৯৫ শতাংশ, মো. নুহু ফরাজী ৪৩.৯৫ শতাংশ, মোসা. ফাতেমা খাতুন ১৬.৯৫ শতাংশ, মোসা. আয়শা খাতুন ১৬.৯৫ শতাংশ, মোসা. খাদিজা খাতুন ২১.৯৭ শতাংশ, মোসা. সাহিদা খাতুন ২১.৯৭ শতাংশ পেয়েছেন।
এসববিষয় অভিযোগ অস্বীকার করে মো. নেছার উদ্দিন ফরাজী, মো. নাজির ফরাজী, মো. ওয়ালিউল্লাহ ফরাজী, মো. নূহু ফরাজী তারা বলেন, শালিসগন তারা মনগড়া মিমাংসা নামা তৈরি করেছেন এগুলা আমরা মানি না। আমরা মিমাংসা নামার বিরুদ্ধে প্রধান শালিসদার শাহজাহান মোল্লার কাছে একটি দরখাস্ত দিয়েছি। এছারাও আমরা আদালতে একটা মামলা দায়ের করেছি মামলা নং ১৫/২০১৭ আদালত যে রায় দিবে সেটা আমরা মেনে নিব। রান্নাঘর ভেঙ্গে ফেলে এবং টয়েলেট হাঁস-মুরগি পালিত ঘর বেরা দিয়ে জোর করে দখল করে নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তারা জানান, বাবার সম্পত্তি আমাদের যে পর্যন্ত জমি সেখানে আমরা বেরা দিয়েছে।
এবিষয় ২য় পক্ষের শালিসদার কামাল হোসেন সিকদার বলেন, আমরা শালিসগণ দুই পক্ষ নিয়ে প্রায় ১০বার তাদের বাড়িতে বৈঠক দিয়েছি দুইজন আমিন দিয়ে মৃত মাইনউদ্দিন ফরাজীর সম্পত্তি মাপজোপ দিয়ে ৫১টি প্লট তৈরি করে নকশা করেছি। আমাদের সব গুছ মিমাংসা নামা তৈরি করে আমরা ৩জন শালিসগণ সাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ১ম পক্ষ বলে শালিসি মানি না, কি কারণে মানে না সেবিষয় তারা কোনো উত্তর দেয়নি। ২য় পক্ষের রান্নাঘর ভেঙ্গে ফেলে এবং টয়েলেট হাঁস-মুরগি পালিত ঘর বেরা দিয়ে জোর করে দখল করে নিছে। ২য় পক্ষ আমাদের জানিয়েছে কিন্তু আমরা ১ম পক্ষ কে মানাতে পারছি না।
এবিষয় ১ম পক্ষের শালিসদার নুর হোসেন বলেন, আমরা শালিসগণ এস. এ খতিয়ান এবং বি.এস খতিয়ান দাগ অনুযায়ী সার্ভেয়ার (আমিন) দ্বারা জমি মেপে ভাগবন্টন করিয়ে একটা মিমাংসা নামা তৈরি করেছি সেখানে আমি সাক্ষর করে কাগজ মধ্যস্থ শালিসদার শাহজাহান মোল্লার কাছে জমা দিয়েছে বাকি শালিসগণ ও দু’পক্ষের সাক্ষর নিয়ে তাদের ফটোকপি দিতে বলেছিলাম। এরপর ১ম পক্ষ ১০ শতাংশ জমির জন্য নাকি দরখাস্ত দিছে কিন্তু সেই ১০ শতাংশ জমি সরকারি রাস্তায় চলে গেছে তাদের বলা হইছে তারপরও তারা মানে না। এখন কি করছে তা জানি না।
এবিষয় মধ্যস্থ শালিসদার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের শাহজাহান মোল্লা বলেন, আমরা ৯জন শালিসদার একাধিকবার তাদের বাড়িতে বৈঠক দিয়ে মৃত মাইনউদ্দিন ফরাজীর সম্পত্তি সার্ভেয়ার (আমিন) দ্বারা মাপজোপ দিয়ে প্লট হিসাবে নকশা তৈরি করে একটা মিমাংসা নামা তৈরি করেছে সেখানে আমরা ৩জন শালিসগণ সাক্ষর দিয়েছি এর মধ্যে ১ম পক্ষ মিমাংসা নামা মানে না তারা আমার কাছে একটি দরখাস্ত দিয়েছে এরপরে ১ম পক্ষ জোর করে ২য় পক্ষের রান্নাঘর টয়েলেট হাঁস-মুরগি পালিত ঘর বেরা দিয়ে দখল করে নিছে। আমাকে ২য় পক্ষের আঃ শুক্কুর ফরাজী জানালে আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে ১ম পক্ষের মো. নাজির ফরাজী নিষেধ করে আসছি। আর এবিষয় নিয়ে বৈঠক হয় নায়।
এবিষয় মধ্যস্থ শালিসদার এবং স্থানীয় বড় কৈবর্তখালী গ্রামের (৪নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য সৈয়দ সুমন বলেন, আমি মেম্বার হিসাবে দুই পক্ষের (মধ্যস্থ) শালিসদার ছিলাম এখানে বিজ্ঞ শালিসগণরা দলিলের এস.এ, বি.এস খতিয়ান অনুযায়ী জমি মাপজোপ করে একটা মিমাংসা নামা তৈরি করেছেন এর পর এবিষয় আর খোজখবর নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে রাজাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানান, এখন পর্যন্ত কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি। আসলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।