শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

রাস্তার ধারে অযত্নে ফোটা ফুলটিতে রয়েছে সম্মোহনী আকর্ষণ

রাস্তার ধারে অযত্নে ফোটা ফুলটিতে রয়েছে সম্মোহনী আকর্ষণ

বরিশাল প্রতিনিধি:

সাজানো বাগানে নয়, রাস্তার ধারে বা গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠো পথে অযতেœ ও অবহেলায় ফোটা ফুলের নাম ভাঁট ফুল। তারপরেও শুভ্র-সাদা এ ফুলের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়। পবিত্র একটা অনুভ‚তি হয়। গ্রামের লোকজন এ ফুলটি অনেক দেখেছেন। তবুও এ ফুলটিতে রয়েছে এক সম্মোহনী আকর্ষণ।
তবে যত দিন যাচ্ছে ততই বিলীন হচ্ছে এর প্রজাতি। এখন বেশ দুর্লভ, গ্রামে কমেছে, শহরে আরও বেশি অনুপস্থিত। কিন্তু ফুলপ্রেমীরা খুঁজলে নিরাশ হবেন না। ফালগুন ও চৈত্রে চোখ খোলা রাখলে, মন থেকে খুঁজলে সন্ধান মিলবে ভাঁটের। সম্প্রতি বরিশালের কীর্তনখোল নদীর তীরে এই ফুলের সন্ধান মিলছে। গ্রামীন জনপদের দু ধারে শতাধিক গাছে অজ¯্র ফুল ফুটে আছে। ঘ্রাণটাও মিষ্টি খুব। এ ফুলের এখন মৌসুম। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার শ্রেষ্ঠ সময়।
ভাঁট ফুল ভাঁটি নামেও পরিচিত। নিজের বিভিন্ন লেখায় কবিগুরু ফুলটিকে ‘ভাঁটি’ নামে সম্বোধন করেছেন। কোন এক প্রকৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, আশপাশে ভাঁটিফুল ফুটিয়া/ রয়েছে দলে দলে…। ভাঁটফুলের আরেক নাম ঘণ্টাকর্ণ। রবীন্দ্রনাথের ‘সে’ শিরোনামে লেখা গল্পটিতে পাওয়া যায় এই ঘণ্টাকর্ণকে। গল্পের একটি চরিত্র ঘণ্টাকর্ণ। এর দুই কানে দুই ঘণ্টা। লেজও দুটি। দুই লেজে দুই হাতুড়ি। ওগুলো দিয়ে নিজেই নিজের ঘণ্টা বাজিয়ে যায়!
আর রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ লিখেছিলেন- বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়…। হ্যাঁ, বেহুলার পায়ের ঘুঙুরকে তিনি ভাঁট ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। প্রিয়তম পতি ল²ীন্দরকে সাপে কাটার পর সতী স্ত্রী বেহুলা তাকে বাঁচানোর সব চেষ্টা করেন। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নেতাই ধোপানির সঙ্গে যান স্বর্গলোকেও। ইন্দ্রকে সন্তুষ্ট করতে রাজসভায় নাচতে হয় তাকে। রূপসী বাংলার কবি সেই নৃত্যরত বেহুলাকে কল্পনার চোখে দেখেছিলেন। পায়ে পরিয়ে দিয়েছিলেন ভাঁটফুলের ঘুঙুর। ফুলটি তাই বেহুলার পদচিহ্নও বটে।
সরেজমিনে দেখাগেছে, বিভিন্ন প্রান্তে ফুটে আছে ভাঁট। বিশেষ করে গ্রামে অঞ্চলে একটু বেশি। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ রাস্তার ধারে, জঙ্গল বা বনের আশপাশে এলাকায় ফুটে আছে। কারও যতেœর দরকার হয় না। কেউ তেমন ঘরে তুলে নেন না। তাতে কী? নিজ উদ্যোগে বেঁচে থাকে গাছ। এর গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। ছোট সাদা পাঁচটি পাপড়ি। চারটির মতো সাদা লম্বা কেশর। ফুলের মাঝখানে হলুদের ওপর হাল্কা মেরুন রংয়ের ছোঁয়া। কেশরের অগ্রভাগে আবার বেগুনি রংয়ের রেণু।
উদ্ভিদবিদ বিজ্ঞানের বর্ণনা মতে, ভাঁটের উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম ক্ল্যারোডেনড্রাম ভিসকোসাম ভেন্ট। এর পাতা চার ইঞ্চি থেকে সাত ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ডিম্বাকৃতি পাতার আগা সরু খসখসে। বোঁটা ১ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা। মঞ্জরিদ- ১২ ইঞ্চির মতো। গাছ মাটি থেকে খুব উপরে ওঠে না। এর কচি কান্ডে নরম রোম হয়। ফুলের বাইরের আবরণেও রোম থাকে। ভাঁটফুলের আছে ওষুধি গুণ। এ ঘণ্টাকর্ণ, ঘেঁটু বা ভাঁটে জ্বর চর্মরোগ বিছের হুল ফোটানোতে ওষুধের কাজ করে। আর কী আশ্চর্য বসন্তকালে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এমনকি ম্যালেরিয়া জ্বরে, পাÐু রোগে, অজীর্ণে এর রস কাজ করে ওষুধের মতো। শোনা যায়, এখনো গ্রামের মানুষ জ্বর হলে এর পাতার রস খেয়ে থাকে। ক্রিমি, পুরনো শ‚ল বেদনা দূর করতে ভাঁট একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ। বৈদ্যদের পাশাপাশি ইউনানী হেকিমেরাও এর ব্যবহার করেন বলে জানা যায়।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ ০১৮৪২২৫৩১২২












All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana