শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ন
বরিশাল প্রতিনিধি:
ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল । বৃহত্তর বরিশালের জীবন ও সংস্কৃতির বিস্তৃত পরিচয় বিধৃত হয়েছে এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা। দেশের সব প্রান্তেই বরিশালের আঞ্চলিক ভাষার পরিচিতি রয়েছে। তবে আধুনিকতার সাথে সাথে দিনের পরিবর্তে পরিবর্তন এসেছে আঞ্চলিক ভাষায়। ঐতিয্যবাহী এ আঞ্চলিক ভাষা ধরে রাখতে কাজ শুরু করছে ‘কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি ইউটিব চ্যানেল। ১২ থেকে ১৫ জন যুবকের একটি টিম কাজ করছে এই ইউটিব চ্যানেলটি নিয়ে।
ইতোমধ্যে তারা সাদ্দাম মাল ও নিজাম উদ্দিন রচনায় আঞ্চলিক ভাষায় নির্মাণ করছে ডজন তিনেক কমেডি নাটক। চিত্রগ্রহণ, পরিচালনা,সম্পাদনা এর দায়িত্বে থাকা কুয়াকাটার তরুন যুবক কবির হোসেন শুভ দেখিয়ে দিয়েছেন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই স্বল্প বাজেটে যেকোনো দৃশ্য ধারণ করা সম্ভব। নাটকগুলো তৈরিতে নাসির মামার ব্যবস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে ভূমিকা রাখেন সহযোগী পরিচালক আবুবকর আবির। নাটকগুলোতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন, সাদ্দাম মাল, নিজাম উদ্দিন ও নাসির মামা। সহযোগী চরিত্রে অভিনয় করে, জাফর মিয়া,সিরাজ মুসুল্লী,আবির,আরিফ,আলমাস,সাগর,পরশমনি,স¤্রাট,নেছার উদ্দিন আশিক,জিসান ও আরিফা রিয়া প্রমূখ।
বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় নাটক তৈরি করে সারা দেশে প্রশংসায় ভাসছে কুয়াকাটার প্রতিভাবান এই অভিনয় শিল্পীরা। তাদের নির্মান করা ১২ পর্বের ‘ক্রিমিনাল জামাই’ নাটকটি এখন আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়াও অস্থির ছেলে, হায়রে সম্পদ,ঘাউরা কাসেম,লাভ ৪২০,ফাও প্যাচাল,পাবলিক টয়লেট, পাতিনেতা, ছাদ প্রেমিক, মন্দ স্বভাব, শেষ পরিনতি,গরুর ডাক্তার, চালান মাইর, বেদিক,প্রবাসীর সম্পদ,ক্রিকেট কান্ড, বাবার সম্পদ নাটকগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিটি নাটকে কমেডির পাশাপাশি রয়েছে বর্তমান সময়ের সমাজ ব্যবস্থার শিক্ষনীয় কিছু অংশ। নাটকগুলো ইউটিউবে প্রকাশের সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ ভিউ হচ্ছে। গ্রামীণ ও শহুরে উভয় জনগোষ্ঠীর কাছে নাটকগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গ্রামীণ মানুষের সাংস্কৃতিক বিনোদনে আঞ্চলিক নাটকগুলো গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। তাদের অভিনিত এসব আঞ্চলিক নাটকে উঠে এসেছে দখিন জনপদের জীবন ও সংস্কৃতির চিত্র। দর্শকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকার পাশাপাশি নাটক গুলো ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখো প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। নাটকগুলো নিয়ে দর্শকদের রয়েছে বেশিরভাগই ইতিবাচক মন্তব্য।
আলোচনার শীর্ষে থাকা তরুন অভিনেতা সাদ্দাম মাল দর্শকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আঞ্চলিক ভাষা ধরে রাখতে আমাদের এই প্রচেষ্ঠা। বরাবরই দর্শকদের ভিন্ন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। লক্ষ লক্ষ দর্শক আমাদের নাটক দেখে ও ভালো মন্তাব্য করে। বিশেষ করে দক্ষিঞ্চলের মানুষ আমাদের আমাদের নাটক বেশি পছন্দ করেন। এটা যেমন আনন্দের। তেমনই অনুপ্রেরণাও। যেখানে দেশে বাংলা কন্টেন্টের ছড়াছড়ি সেখানে তাদের সঙ্গে পাল্টা দিয়ে লক্ষ লক্ষ দর্শকের হৃদয়ে জায়গা পাওয়াটাও কিন্তু বড় ব্যাপার। আঞ্চলিক নাটকের জয় হোক সর্বত্র।
ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা নাসির মামার মনে প্রশ্ন ছিল, অন্য দেশের ইউটিউবাররা পারলে আমরা পারবো না কেন? আর এই ইচ্ছা শক্তি নিয়েই খোলা হয় ‘কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়া’ ইউটিউব চ্যানেলটি খুলে তারা। এই চ্যানেলেই নিয়মিত নিজেদের তৈরি নাটক ও কৌতুক ভিডিও আপলোড করে যাচ্ছে তারা। তাদের দাবি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে আরও উন্নত কিছু করে দেখাতে পারবে তারা।
এদিকে পরিচালনার পাশাপাশি একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ধাপে ধাপে নাটকগুলোর চিত্রগ্রহণ করেন পরিচালক কবির হোসেন শুভ নিজেই। এরপর কম্পিউটারে কিছু সফটওয়্যার ব্যাবহার করে করেন সম্পাদনার কাজ। আকার ও প্রকার ভেদে একটি নাটক তৈরি করতে তাদের সময় লাগে পাঁচ থেকে সাতদিন। তরুন এই যুবকের তৈরি নাটক দেখে দেশের অনেক পেশাদার নির্মাতাদের কাজের মান নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়াতে।
পরিচালক কবির হোসেন শুভ বলেন, নাটক তৈরিতে আমাদের নানান সংকট রয়েছে সংকটের মধ্যেই সবাই ভালোবেসেই কাজ করছে। প্রথমে আমাদের নাটকে তেমন সাড়া ছিলো না, তবে বর্তমানে নাটকগুলো ইউটিউবে দর্শকের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। নাটক গুলো দর্শকরা দেখলে নির্মাতা হিসেবে সেটি অবশ্যই ভালো লাগার। কাজের প্রতিও আরো আগ্রহ বেড়েছে।