সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পরেছে নলছিটি-দপদপিয়া সড়ক। নলছিটি তথা ঝালকাঠি জেলার দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বরিশালে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি এখন যে কোন সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সারা বছর ভাঙনের পালা থাকলেও বর্ষায় তা ভয়ংকর রুপ ধারণ করে।
নলছিটি শহর থেকে পূর্ব দিকে আগালে মল্লিকপুর থেকে শুরু করে খোজাখালি পর্যন্ত সড়ক থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র ৫-১০ফুট। প্রতিদিন বিশাল বিশাল মাটির খন্ড নদীতে ভেঙ্গে পরছে। সুগন্ধার ভাঙনে ইতিমধ্যে এই এলাকার অনেক মানুষজন নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। এমনই একজন হলেন নলছিটি শহরের ব্যবসায়ী ইউনুচ বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমাদের প্রথম বসতবাড়ী ছিল পৌর এলাকার খোজাখালি গ্রামে কিন্তু সেখানের কোনকিছুই এখন আর নেই সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। আমাদের বসতবাড়ীর সেই জায়গায় এখন আনুমানিক কয়েকশ হাত পানি হবে। এরপর আমরা একটু এগিয়ে সারদল গ্রামে পশ্চিম অংশে নতুন ঘর নির্মান করি কিন্তু সেখানেও ইতিমধ্যে ভাঙ্গনে আমাদের বাড়ীর পশ্চিম পাশের কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন নদী বসতঘরের একদম নিকটে চলে আসছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে এখানে আছি ,কিন্তু বর্ষায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুব তারাতারী এখান থেকে সবকিছু নিয়ে অন্যত্র যেতে হবে। সারদল গ্রামের বাসিন্দা মো. কামাল মৃধা বলেন, আমাদের নলছিটি শহরে বিভিন্ন কাজের জন্য প্রতিদিন অসংখ্যবার যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যানবাহন এই সড়ক দিয়েই চলাচল করে।
এখন যদি এই সড়ক নদীতে ভেঙ্গে যায় তাহলে আমাদের দূর্ভোগের সীমা থাকবে না। তাই আমাদের দাবী ভাঙন রোধে যেন তারাতাড়ি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমরা ঝালকাঠি-২ আসনের সাংসদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু (এমপি) মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নলছিটি-দপদপিয়া সড়কটির মোট দূরত্ব ১০কিঃ মিঃ তার মধ্যে বেশি ঝুকিপূর্ন মল্লিকপুর থেকে খোজাখালি এই অংশের দূরত্ব আনুমানিক ১ কিঃমিঃ হবে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে ১৩কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের উন্নয়ন করা হচ্ছে, যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে সড়কটি দুই পাশে ৩ফুট করে চওড়া করা হয়েছে তাই বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে।
এছাড়া নলছিটি শহর থেকে শুরু করে তার আশেপাশের ইউনিয়ন সমূহের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন তাদের পন্য এই সড়ক দিয়েই পরিবহন করেন। তাই তাদের দাবি ভাঙ্গন রোধে যেন এখনই কার্যকরই পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর(সাবেক) নুরুল ইসলাম স্বপন বলেন,সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা শুনেছিলাম তবে তার কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না । যদি প্রকল্পটি দ্রুত পাশ হতো তাহলে এখানের মানুষের দূর্ভোগ কিছুটা হলেও লাগব হতো।
স্থানীয়রা বলেন সুগন্ধা নদী এই অংশে ইউ আকৃতির হওয়ার কারনেই এখানে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশি। প্রবল স্রোতের চাপে নদীর নিচের মাটি সরে গিয়ে উপরের মাটি ভেঙ্গে পরছে। যদি নদীর নিচের অংশে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে শক্ত বাঁধ দেওয়া হয় তাহলে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন,ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরে আমাদের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা আছে। সেই প্রকল্প গৃহিত হলে নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।