বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবার দেখালেন নতুন চমক। সম্পত্তি জব্দের নির্দেশের আগেই সব বেচে দিয়ে গত ৪ মে ঢাকা ছাড়েন তিনি। যাওয়ার আগে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়েছেন সব টাকা। বিক্রিও করেছেন ভাটারার বহুতল ভবন ও দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট। এদিকে দুদকের ডাকে সাড়া না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইনজীবী।
সময়ের অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত নাম সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। অনুসন্ধানে নেমে তার নামে-বেনামে অঢেল টাকা ও সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আগামী ৬ জুন বেনজীরকে তলব করেছে সংস্থাটি।
তবে আলোচনা-সমালোচনা যখন তুঙ্গে, তখন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পরিবার সমেত দেশ ছেড়েছেন পুলিশের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী গত ৪ মে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। তবে নিজে তো গেলেন, কিন্তু অঢেল সম্পত্তি কি রেখেই গেলেন? নাকি নিয়ে গেলেন?
সূত্র বলছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো এখন প্রায় শূন্য। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার আগেই অ্যাকাউন্টের অধিকাংশ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। শুধু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করেই থেমে থাকেননি। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিও করেছেন- এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের প্লাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় বেনজীরের নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে জুমেরা এলাকার ৪০তলা কনকর্ড টাওয়ারে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় ২৯ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন। দুবাইয়ের মস্কো নামের একটি বহুতল হোটেলে বেনজীরের যৌথ বিনিয়োগের তথ্যও আছে। আর ঢাকার ভাটারা থানাধীন একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বেনজীরের একটি সাততলা ভবন ছিল, সেটাও সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর এসব সম্পদ বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম বলেন, যেহেতু বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন দুদকে তলব করা হয়েছে, তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দুদক। যদি নির্ধারিত সময়ে না আসেন, তাহলে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পাশের পুলিশ কর্তারাও এখন চিনছেন না বেনজীরকে। পুলিশ সদর দফতরের অন্তত ৫টি কেনাকাটার খাত থেকে বিপুল অর্থ লোপাটে যেসব কর্মকর্তা সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন; তারাও বেনজীরকে ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। এবার তাদের উপরেও চোখ পড়েছে দুদকের। বেনজীর পরিবারের সম্পদের তল্লাশির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নামেও সম্পত্তি কেনার তথ্য পেয়েছে দুদক।
গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৩৪৫ বিঘা জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেন আদালত।
এদিকে দেশ ছাড়ার ব্যাপারে কিছু জানেন না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, ‘তাকে দেশত্যাগের ব্যাপারে এখনও কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। তার আগেই তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে শুনেছি। যদিও তার যাওয়ার ব্যাপারে আমি জানি না। বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে কথা বলব।’