শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে এবং আরও সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। গতকাল সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এসব কথা বলেন।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক শাসন দেখতে চাই। আমরা চাই, বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের সরকার ঠিক করবেন। এ বিষয়ে আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে আমরা নজর রাখব।’
ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে মিলার বলেন, এ ক্ষেত্রে জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশার প্রতিফলন ও একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার বিষয়ে তাঁরা জোর দিচ্ছেন এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাথু মিলার বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। আমরা শান্ত থাকার ও আগামী দিনগুলোতে সংযম প্রদর্শনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত ও বাংলাদেশের আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাই।’
একই সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হতাহতের ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত খবরে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন ও যন্ত্রণা ভোগ করছেন তাঁদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান তিনি।
একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে (সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টাকে) যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, তাঁরা চান, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবেন।
এদিকে ব্রিফিংয়ে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ম্যাথু মিলারের কাছে একাধিক প্রশ্ন করা হয়। এমনই একটি প্রশ্নে একজন সাংবাদিক বলেন, ‘স্বৈরশাসক’ শেখ হাসিনার ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশে’ কয়েক শ মানুষ নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ এখন মুক্ত। কিন্তু পরিস্থিতি এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?
জবাবে মিলার বলেন, ‘সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রথমেই আমাদের সমবেদনা জানাই। এখন আমরা সহিংসতার অবসান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও বাংলাদেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নেওয়া উচিত।’
এক প্রশ্নে মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘শেখ হাসিনা পশ্চিমা কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ থাকায় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করবে কি না?’
এ ধরনের কোনো অনুরোধের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান মুখপাত্র।
বাংলাদেশে সরকার পতনের পর সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সংখ্যালঘু ও সাধারণ লোকজনকে রক্ষায় কী করছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, প্রথমত, তাঁরা সহিংসতার অবসান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যা নেওয়া হবে, তা আইন অনুযায়ী হতে হবে। সহিংসতা ও আইন লঙ্ঘনের জন্য যে বা যাঁরাই দায়ী, তাঁদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
মুখপাত্র বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে সংঘটিত সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া জরুরি।
একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে (সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টাকে) যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে কি না, জানতে চাইলে মিলার বলেন, তাঁরা চান, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবেন।
সরকার পতনের পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে কোনো উদ্বেগ আছে কি না, সে প্রসঙ্গে মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থসহায়তা দিয়েছে। এ সহায়তা কর্মসূচিতে সরকার পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে কি না, সে বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক মন্তব্য করবেন না। তবে তিনি নিশ্চিতভাবে এ আশা করেন, এটা ঘটবে না। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশ এ শরণার্থীদের আতিথেয়তা অব্যাহত রাখবে এবং এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁরা কাজ করে যাবেন।
২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক, উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসহায়তা খাতে ২১২ ডলারের বেশি যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিয়েছে বলে উল্লেখ করে মিলার বলেন, এসব কর্মসূচি নিয়ে তাঁর কাছে কোনো (নতুন) ঘোষণা নেই। এ কর্মসূচি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কীভাবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, ‘গত কয়েক দিন আমরা খবরে দেখেছি, বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনাভিযান চালানোর আহ্বান সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা নিশ্চিতভাবেই উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি, মানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার বৈধ অধিকার রয়েছে। তাই ওই খবর যদি ঠিক হয় তবে, তা এক ইতিবাচক অগ্রগতি।’