মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঝালকাঠির নিহত ৫ জনের তিনজন পেশাজীবী, দুজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঝালকাঠির নিহত ৫ জনের তিনজন পেশাজীবী, দুজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ঝালকাঠি জেলায় ৫ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে পেশাজীবী ৩ জন এবং বাকি ২ জন ছাত্র। ঝালকাঠি সদরে ২ জন, নলছিটিতে ২ জন ও রাজাপুর উপজেলায় ১ জনকে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সদর উপজেলার বিনয়কাঠি এলাকার কামাল হোসেন সবুজ (৪০) ঢাকায় গাড়ি চালাতেন। ১৯ জুলাই সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। শেখেরহাট এলাকার হৃদয় হাওলাদার (২৩) পোশাক শ্রমিক। ১৯ জুলাই রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সেলিম তালুকদার (২৮) গার্মেন্টস কর্মকর্তা। ১৮ জুলাই বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হলে ৩১ জুলাই রাতে মারা যান। একই উপজেলার নাইম হাওলাদার (১৭) এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। রাজাপুর উপজেলার বলাইবাড়ি এলাকার মনির হেসেন (১৮) এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ১৯ জুলাই ঢাকার শাহজাদপুরের বাঁশতলায় নিহত হন।

গার্মেন্টস কর্মকর্তা সেলিমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বাড্ডা-লিংক রোডের কুমিল্লা পাড়ার বাসা থেকে সকালে নারায়ণগঞ্জে তার অফিসে যাওয়ার জন্য বের হন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘর্ষে আটকা পড়েন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেলিম গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মাথা, বুক ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। কে বা কারা প্রথমে মুগদা হাসপাতালে নেন তাকে। সেখান থেকে সেলিমের মোবাইলে থাকা তার মায়ের মোবাইল নম্বরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোন দেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ফোনে খবর পেয়েই স্বজনরা ওই হাসপাতালে ছুটে যান। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে স্বজনরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউ খালি পাননি। একইসঙ্গে প্রশাসনিক হয়রানির ভয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

পরদিন স্বজনরা ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করান সেলিমকে। ৩১ জুলাই রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে ১ আগস্ট সকালে চিকিৎসক তার মৃত্যু সনদ দেন। স্বজনরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, প্রায় এক বছর আগে বিয়ে করেন সেলিম। বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন, এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজো।

মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে সেলিমের ছোট বোন সোমা বলেন, এ ঘটনায় আমরা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে চাই না। আমরা যা হারানোর তা হারিয়েছি। পত্রিকায় প্রকাশ হলে বা মামলা করলে আমরা তো আর ভাইকে ফেরত পাবো না। তাই কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।

এদিকে কামাল হোসেন ওরফে সবুজ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের গাড়িচালক ছিলেন। গত ১৯ জুলাই শনিবার সকালে ঢাকার বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকায় আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কামাল। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে মরদেহ ঝালকাঠি নিয়ে আসেন স্ত্রী সাদিয়া বেগমের ভাই রিপন হাওলাদার। তিনি জানান, শনিবার সকালে বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নাসতা খেতে বের হয়েছিলেন কামাল হোসেন। তখন কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যে পড়ে হঠাৎ কামাল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। রিপন বলেন, আমার ভাগ্নে-ভাগ্নিরা বাবাহারা আর বোনটি বিধবা হয়ে গেলো। ওদের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।

কামাল হোসেন ওরফে সবুজের (৩৮) স্ত্রী সাদিয়া বেগম (রানু) বলেন, এই তিন ছেলে মেয়ে এখন এতিম হয়ে গেলো। আমি ওদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো? এখন কে ওদের দেখবে?

কামাল হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বালকদিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মুনসুর হাওলাদার। গত সোমবার সকালে সদর উপজেলার আগরবাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে কামাল হোসেনকে দাফন করা হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়া একজনকে আগরবাড়ি ও আরেকজনকে শেখেরহাট এলাকায় দাফন করা হয়েছে।

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ আলী জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিমের ও এর আগে নাইম নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

এছাড়া রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজের ছাত্র মনির হোসেন নামের একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ বলাবাড়ি এলাকায় দাফন করা হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া সব ঢাকাতেই সম্পন্ন করা হয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

সম্পাদকীয় কার্যালয়: কাঠালিয়া বার্তা
কলেজ রোড, কাঠালিয়া, ঝালকাঠি।
মোবাইল: 01774 937755









Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana