বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাঁচ বার নাম এবং অসংখ্যবার স্থান পরির্তন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে ৩৭ বছর পর আটক হয়েছে মো. মিজানুর রহমান সিকদার (৫৯) নামের এক যাবজ্জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন সরকার। গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় কাঠালিয়া গ্রামের মৃত মতিয়ার রহমানের ছেলে।
গত বুধবার (২৪ জানুয়ারী) রাতে কাঠালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন সরকার ও এসআই কে, এম রিয়াজ রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরগুনা জেলার বামনা থানা পুলিশের সহায়তায় বামনা উপজেলার সদরে অভিযান চালিয়ে যাবজ্জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী মিজানকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত মিজান ১৯৯৬ সালে বরগুনা জেলার বেতাগী থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলার যাবজ্জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত প্রধান আসামী । এ মামলায় তার স্ত্রী নাজমা বেগমও আসামী ছিলেন। তারও যাবজ্জীবন সাজা হয়। (মামলা নং-জিআর ৪৬/৯৬)। এ মামলায় আসামীদের অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন সাঁজা হয় স্বামী ও স্ত্রীর।
মামলার বিবরণে জানাগেছে, ১৯৯৬ সালে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদরের আসমা আক্তার নামের এক নারীকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে লঞ্চের কেবিন করে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে একটি হোটেলে আটকে রেখে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক বার ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ওই নারী কৌশলে ঢাকা থেকে পালিয়ে এসে মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী নাজমা বেগমকে আসামী করে বেতাগী থানায় একটি অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আদালত আসামীদের অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন সাঁজা প্রদান করেন।
রায়ের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ায় মিজান ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম। গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান তার নাম পরিবর্তণ করে মো. হারুন অর রশীদ, মো. তৌহিদুল ইসলাম, মো. স্বপন সিকদার, মো. সাগর সিকদার ও মো. মুহিত সিকদার পিতা মো. মতিয়ার রহমান সিকদার নামে পরিচয় দিতো। এমনকি মো. হারুন অর রশীদ, পিতা মো. মতিয়ার রহমান নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি) কার্ড বের করে মিজান।
মিজানুর রহমান বাগেরহাট জেলার শরনখোলা (বিজানের পাড়) এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার (জামপুর পশ্চিম পাড়া) বাজনা বাজনাবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে আতœগোপনে ছিল। সম্প্রতি বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা সদরের শ^শুর বাড়ীতে আসে মিজান। বুধবার রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে মিজানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর’২৩ এসআই কে,এম রিয়াজ রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১ এর সহায়তায় নারয়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার জামপুর পশ্চিম পাড়ার একটি বাসা থেকে মিজানুর রহমানের স্ত্রী যাবজ্জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী নাজমা বেগমকে (৫৩) গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করে পুলিশ।
কাঠালিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. নুরুল আলম মিলু জানায়, মতিয়ার সিকদারের ছেলে মিজানুর রহমান সিকদার তারই এলাকার বাসিন্ধা। ৩৫/৩৬ বছর পুর্বে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে স্বপরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় তারা।
থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন সরকার জানান, দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর যাবজ্জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান সিকদার ঢাকার বনানী, শেরে বাংলা নগর ও বাগেরহাটের শরনখোলা থানার একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী। তাকে কোর্টে চালান করা হয়েছে।