বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ন
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় এবার ব্যাপক পরিমাণে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। আর বাজারে মৌসুমি সবজিগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও চড়া। ফলে শীতকালীন এসব সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছে কৃষক। এতে তাদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। এবার উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫২১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২৫ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জানাগেছে, শীতকালীন সবজির মধ্যে এ অঞ্চলে বর্তমানে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, টমেটো, শিম, মূলা, করলা, লালশাক ও বেগুন খুব বেশি পরিমাণে চাষ হয়েছে। পাশাপাশি স্বল্প কিছু জমিতে ধনেপাতা, গাজরসহ অন্যান্য খোরাকি সবজিও আবাদ হয়েছে। এসব সবজি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে আমুয়া ইউনিয়ন ও শৌলজালিয়া ইউনিয়নে।
উপজেলার বাশঁবুনিয়া, দক্ষিন কচুয়াসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, লালশাক, শিম, লাউ, মুলাসহ প্রায় ২০ ধরনে সবজির আবাদ হয়েছে। কোনো কোনো জমিতে সবজি আবাদ ও পরিচর্যা ছাড়াও উত্তোলন শুরু করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আলু আবাদের পাশাপাশি সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন কৃষকরা। এখন পর্যন্ত যারা শীতকালীন সবজি বিক্রি করতে পেরেছেন তাদের প্রত্যেকেই খরচ পুষিয়ে লাভবান হয়েছেন। আর উৎপাদিত এসব সবজি কাঁঠালিয়া উপজেলা ছাড়াও আশপাশের উপজেলার বাজারগুলোতে বিক্রয় করা হচ্ছে। তারা বলছেন, এবার সব ধরনের সবজি চাষিরা লাভবান হয়েছে।
বাঁশবুনিয়া এলাকার মো. স্বপন হাওলাদার বলেন, ৩৫ শতক জমিতে দেশীয় জাতের শিমের চাষ করেছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। গত দেড় মাসে শিম বিক্রয় করে ইতোমধ্যে ৬০ হাজার টাকা আয় করেছি। এভাবে আরও তিন মাস সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
দক্ষিণ কচুয়া গ্রামের সবজি চাষী মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, এবার ১’শ শতাংশ জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে সীম, লাউ, ফুলকপি, জালি, মিষ্টি কুমড়া ও টমেটো।
অপর সবজি চাষি দক্ষিণ চেচঁরী গ্রামের মো. রুস্তম হাওলাদার বলেন, এবার ৫০শতাংশ জমিতে সাড়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে মরিচ, বেগুন, সীম, ফুলকপি, লাউ, লালশাক ও টমেটো বুনেছি।
বাঁশবুনিয়া গ্রামের চাষি আশ্রাব আলী হাওলাদার জানান, এবার তিনি ১২ হাজার বাঁধাকপি ও ৩ হাজার ফুলকপির চাষ করেছেন। জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। তাই লাভের আশা করছেন তিনি।
কাঁঠালিয়া সদর ফাজিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. নুর-ই-আলম ছিদ্দীকী জানান, এ উপজেলা সব ধরনের সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রতিবছর উপজেলায় বিপুল পরিমাণ সবজির চাষ হয়। তাতে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া উৎপাদিত সবজির দামও ভালো পাওয়া যায়। সে জন্যই এ বছর কৃষকরা শীতকালীন সবজি আবাদে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক ফারুক হোসেন খান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও কাঠালিয়ায় সবজির বাম্পার ফলন হবে। এতে বাজারে সবজির সংকট কেটে যাবে, একই সঙ্গে দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. হাছিবুর রহমান জানান, বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে এ উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষাবাদে দেরি হয়েছে। যদিও এবার আমাদের উপজেলায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ হাজার ৫২১ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২৫ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ইমরান বিন ইসলাম জানান, উপজেলায় আগাম শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষিবিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। উপজেলায় শাক-সবজি চাষ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে পরামর্শের পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। যদিও এবার বন্যা, ভারী বৃষ্টি এবং জলাবদ্ধতার জন্য দেরি হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ধকল কাটিয়ে কৃষকেরা এগিয়ে যাচ্ছে।