শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবুজ সংকেতও দিয়ে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জানিয়েছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন প্রয়োগে কোনো সমস্যা নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ২৭ জানুয়ারি বুধবার বেলা সাড়ে তিনটায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপতাালের ২৫ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা টিকা নেবেন, তাদের মধ্যে ৫ জনের টিকা দেওয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রমের সূচি অনুযায়ী, দেশে প্রথম টিকা নেবেন এ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। কোনো কারণে তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত আছেন আরও দুই সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকার। চিকিৎসকদের মধ্যে প্রথম টিকা নেবেন হাসপাতালটির মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন। আরও দুই চিকিৎসকের নামও রয়েছে এ তালিকায়। আর ভ্যাকসিনেটর হিসেবে রয়েছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার ও দীপালি ইয়াসমিন। প্রথম টিকা গ্রহীতা হিসেবে নাম থাকায় রুনুর অনুভূতি জানতে গতকাল মঙ্গলবার তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি কোনো রকম মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টিকা প্রদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমদ এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম যারা টিকা নেবেন তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই শুরু করার চিন্তা করছি। আমাদের হাতে থাকা ৭০ লাখ টিকার বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সেরামের টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন যারা, যারা বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এ জন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনার টিকা সরকারের কাছে কোনো রাজনীতি নয়। এটা মানুষের জীবনরক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, ২৮ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম। ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানের জন্য এসব হাসপাতাল প্রস্তুত। যারা টিকা নেবেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এর পর সব ঠিক থাকলে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে টিকার প্রয়োগ শুরু হবে।
বঙ্গবন্ধুৃ শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, আমাদের টিকাদান সেন্টার প্রস্তুত। এখানে যারা স্বেচ্ছায় টিকা নেবেন তাদের নাম-ঠিকানা দেওয়ার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের সব বিভাগকে চিঠি দিয়েছি এবং বুধবার সকালের মধ্যে আগ্রহীদের তথ্য দিতে নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা তথ্য পাওয়ার পরই তালিকা তৈরি করব এবং ২৮ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করব।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের এখানে যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের তালিকাও করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি (আগামীকাল) সকাল ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে। এদিন কয়েকটি ধাপে ১০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিধপ্তর ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশে সরকারের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ সোমবার সকালে দেশে এসে পৌঁছেছে। এর আগে ২০ জানুয়ারি ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। সব মিলিয়ে ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে।
টিকা প্রয়োগের অনুমোদন
ভারত থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, টিকার প্রতিটা লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সে দেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ-ে বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেসব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।