শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় ইয়াতিমখানা মাদরাসা ভবন ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চেঁচরী রামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চেঁচরী আব্দুল মুত্তালিব ইয়াতিমখানা ও তাহফিজুল কুরআন মাদরাসায় এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
সরজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ চেঁচরী আব্দুল মুত্তালিব ইয়াতিমখানা ও তাহফিজুল কুরআন মাদরাসার নব-নির্মিত একটি টিনসেট ভবন, পিলার ও দেয়াল ভেঙ্গে ফেলায় ভবনের এক অংশ মাটিতে পড়ে রয়েছে।
মাদ্রাসার ছাত্র ওলিউল্লাহ জানায়, যেদিন ঘটনা ঘটে সেদিন ওই সময় আমি ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে এসে দেখি মাদ্রাসার নতুন ভবন ভাংচুর করছে। এসময় ঘরের দরজা ও জানালায়ও ইট নিক্ষেপ করে। । ছাত্র মো. নাইম হোসেন জানায়, ঘটনার দিন রাতে প্রতিদিনের মতো লেখাপড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছি। ভোর রাতে সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসা ভাংচুর করার শব্দে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন দরজা খুলতে গেলে দরজার ও পার্শে¦ সন্ত্রাসীরা দাড়িয়ে ছিল এবং দরজা খুলতে দেয়নি। দরজার উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করে ও ইট নিক্ষেক করে। পরে পুলিশ আসে এবং ততখনে তারা মাদ্রাসা ভেঙ্গে চলে যায়।
অপর এক ছাত্র মো. সাকিল খান বলে, সোমবার রাতে সন্ত্রাসীরা এই মাদ্রাসায় হামলা করে। আমাদের পুরাতন কাঠের ঘরের মধ্যে তারা আটকে রাখে। আমরা বাহিরে বের হতে চাইলেও বের হতে দেয় নাই। এসময় তারা দাও ও রামদা নিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। আমরা অনেক ভয় পেয়েছি।
অন্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত সোমবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে আমাদের মাদ্রাসায় আটকে রেখে মাদ্রাসার নতুন ভবন ভাংচুর করে। এসময় আমাদের ভয়ও দেখানো হয়।
মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মাদ্রাসাটি দীর্ঘদিন ধরে খুবই সুনামের সাথে লে আসেছে। কিন্তু একদল সন্ত্রাসী বাহীনি তাদের এটা সহ্য না হওয়ায় মাদ্রাসার জমি দখল করার জন্য অনেক দিন থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। অবশেষে সেদিন রাত সাড়ে ৪টার দিকে একদল সন্ত্রাসী এসে মাদ্রাসার নতুন নির্মিত ভবনটি ভাংচুর করে। এসময় আমি অত্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানালে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ আসার খবর পেয়ে হামলাকারীরা চলে যায়। ভবন ভাংচুরের পর বর্তমানে ছাত্রদের নিয়ে যে ঘরটিতে থাকছি, এখানে থাকার মতো কোন পরিবেশ নেই। নতুন ভবনটি ভাংচুর করার কারণে প্রচন্ড এ শীতে ছাত্রদেরকে মাদ্রাসার জরাজীর্ণ একটি ঘরে রাখা হয়েছে।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এম আর মালেক জানান, অত্র প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দীর্ঘদিন যাবৎ একদল সন্ত্রাসী ভ‚মিদস্যু গ্রæপ জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার গভীর রাতে স্থানীয় মোশারেফ জমাদ্দারের নেতৃত্বে আব্দুল কুদ্দুস, অসিম, মনির, বেল্লাল ও শহিদুলসহ প্রায় শতাধিক লোকজন এসে মাদ্রাসার ভবনটি ভাংচুর করে চলে যায়। এর পূর্বে হামলাকারীরা আমার বসত বাড়িতে হামলা চালায় এবং ঘরে উঠে আমাকে হত্যা করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। তারা ঘরে উঠতে না পেরে প্রতিষ্ঠানের ভবনটি ভাংচুর করে আনুমানিক ১০লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। ইতিপূর্বেও ভূমি দস্যু বাহিনী কয়েকবার হামলা করে প্রতিষ্ঠানটির অনেক ক্ষতিসাধন করে। তাই মাননীয় প্রধনমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন যাতে অসহায় এতিম ছাত্রদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা পায়।
মাদরাসা ভাংচুরের বিষয়ে মো. মোসারেফ জমাদ্দার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার বাড়ি রয়েছে কোথায়, আমি নিজেই কিছু বুঝি না। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে মালেক। সে যদি স্বপ্ন দেখে আমি এসবের কিছু বুঝি না। মালেকের সাথে আমার এমনি বিরোধ থাকতে পারে কিন্তু এগুলোতো কোন কথা না। ও জায়গায় তো আমার কিছু না। কিন্তু সে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে জমি পাবে অন্য দফারা। সে যে আমাকে কি বোঝে আমি তার কিছু বুঝি না। সে দেখে আমাকে বিষ। সেখানে আমার কোন বাড়ি ঘর নেই, অন্য ইউনিয়ন থেকে এসে এতো ক্ষমতা, পারলে একজন বলুক না কেউ আমাকে দেখছে।
কাঠালিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুরাদ আলী বলেন, মারদাসার কর্তৃপক্ষ জানানোর পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।