বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন
বার্তা ডেস্ক:
দুই বছর মহামারী করোনায় বন্ধ থাকার পর ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আমুুয়া বন্দরের হলতা নদী মোহনায় ঐতিহ্যবাহী দশোহরা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার আমুয়া বিষখালী নদীর তিনটি শাখা হলতা নদীর মোহনায় এবার দশোহরা উৎসবে উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হয়।
বিজয় দশমীর শেষ বিকেলে নদী মোহনায় দুর দুরান্ত থেকে যান্ত্রিক ট্রলারে দূর্গা প্রতিমা এ নদী মোহনায় নিয়ে এসে সন্ধ্যায় মোহনায় বিসর্জণ দেওয়া হয়। এসময় হলতা নদীর মোহনায় দেখাযায়, দশোহরা উৎসবকে ঘিরে দুর দূরান্ত থেকে উৎসব মুখর মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবস্থল যেন জন সমুদ্রে পরিনত হয়েছে। শতশত যান্ত্রিক ট্রলার আর নৌকায় চড়ে নাচ গানের মধ্য দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ ঐতিহ্যবাহী দশোহরা উৎসব পালন করছে। উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন দূর্গা পূজা মন্ডপ হতে সেখানে যান্ত্রিক ট্রলারে করে দূর্গা প্রতিমা দশোহরা উৎসবে নিয়ে আসা হয়। প্রতিমা বহনকারী ট্রলার নদীর মোহনার চারপাশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে এ উৎসব পালন করেন। উৎসবে নানা ধর্মের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন।
দশোহরা উদযাপন কমিটির সভাপতি সঞ্জয় রায় জানান, আমুয়ার দশোহরা উৎসবে সরকারী-বেসরকারী কোন সহায়তা না থাকায় আড়াই শত বছরের এ ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি আগের চেয়ে অনেক গুন কমে গেছে।
এ ব্যাপারে বাশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা নারায়ণ কাঞ্জিলাল বাবুল ঠাকুর জানান, আড়াইশ বছরের পুরানো আমুয়ার দশোহরা উৎসব। ১৭০০ শতকে শেষ দিকে অত্র এলাকার জমিদার রায় বিহারী লাল মিত্র বাহাদুর আমুয়া বন্দরে দশোহরা উৎসবের প্রচলন করেন। সেই থেকে আজ অবধি এ উৎসব চলে আসছে। অনুষ্ঠানে জারি সারি কবিগান নৌকাবাইচসহ না অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দশোহরা উৎসবে আমুয়া বন্দর ঘিরে মেলা বসে। নানা সংকটে এ উৎসব এখন কোনমতে টিকে আছে। তাছাড়া উপকুলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ খাল গুলোর নাব্যতা হ্রাস ও খালে বাধ দেওয়ায় নৌ চলাচল কমে গেছে। ফলে উৎসবে নৌপথে আগের মত প্রতিমা না আসতে পারার কারনে এ উৎসবটি অনেক বিলিন হতে বসেছে। পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে আমাদের এ সংস্কৃতি।
আমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম ফোরকান বলেন, আমুয়ার দশোহরা ও বারদশোহরা উৎসব শিশুকাল হতেই দেখে আসছি। উপকুলীয় এলাকার হিন্দু মুসলমানদের মিলন মেলা হিসেবে এ উৎসবকে আজও দেখা হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. এমাদুল হক মনির বলেন, বর্তমান সরকার ঐতিহ্যের এ উৎসব টিকিয়ে রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে আমাদের সকলের উচিৎ সক্রিয়ভাবে এ দশোহরা উৎসব টিকিয়ে রাখা। কেননা এ উৎসব আমাদের আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অংশ।