বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

একটি মোবাইল কিনে জীবনটাই শেষ!

একটি মোবাইল কিনে জীবনটাই শেষ!

দেশের অন্যতম ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকম থেকে মোবাইল কিনে মো. রেহান নামে এক ব্যক্তি বড় ধরনের বিপদে পড়েছেন। এমনকি তাকে দুই মাস জেলও খাটতে হয়েছে। ডিজিটাল এই মার্কেটপ্লেস থেকে মোবাইল কিনে যে বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রেহান সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করেছেন ‘সাইবার ৭১’ এর সাথে।সাইবার ৭১ তার সে অভিজ্ঞতাগুলো বিস্তারিত তুলে ধরে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে।স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘বিক্রয় ডটকম থেকে মোবাইল কেনার আগে হাজারবার চিন্তা করবেন। আপনি বিপদে পড়ে টাকা, সম্মান সবকিছু খোয়াবেন। কিন্তু বিক্রয় ডটকমকে পাশে পাবেন না। বিক্র‍য় ডটকম থেকে মোবাইল কিনে চোরাই ফোনের মামলার আমাকে দুই মাস জেলও খাটতে হয়েছে।

২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে বিক্রয় ডটকমের নারায়ণগঞ্জের চাষাড়াতে আমার বন্ধু একটি oppo A95 মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখে আমাকে জানায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম বক্স এবং ক্যাশমেমো আছে কিনা। বলল, সবকিছু আছে ১০ দিন ব্যবহার করা ফোনোম্যানিয়া শোরুম থেকে কেনা। সাধারণত বক্স আর মেমো থাকলে বাংলাদেশের যেকোনো দোকানদার সেই ফোন কিনে রাখে, আমিও তাই করলাম। ফোনের সাথে ফুল বক্সসহ ‘phonomania’ নামের মোহাম্মদপুরের একটি জনপ্রিয় মোবাইল শপের সিলসহ ক্যাশমেমো ছিল। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমি মোবাইলটা ক্রয় করি। তারপর ২২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর নামক জায়গা থেকে মোবইল চুরির অভিযোগে পুলিশ আমাকে নিয়ে যায়। আমি তাদেরকে ফুল বক্সের সঙ্গে ক্যাশমেমোসহ সকল প্রমাণ দিই। এমনকি যার থেকে কিনেছি তার নাম্বারও দিই এবং মোবাইলটি যদি চুরি হয়ে থাকে, তাহলে যে দোকানের ক্যাশমেমো সেই দোকানে অভিযান চালান। তাদের ক্যাশমেমোর সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে দেখেন তাহলেই সব প্রমাণ হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ নাছোরবান্দা, তাদের কথা- এতকিছু দেখার সময় নেই। তোমার কাছে পেয়েছি, তুমিই চুরি করেছ।

তারপর বললাম, স্যার আমার মোবাইল ট্রেস করে দেখেন আমি জীবনে কোনোদিন টাঙ্গাইল গেছি কিনা অথবা টাঙ্গাইলের কোনো মানুষের সাথে কোনোদিন কথা বলছি কিনা? কিন্তু পুলিশ কোনো কথাই শুনল না। নারায়ণগঞ্জ থেকে রাত ১০টায় টাঙ্গাইলের উদ্দেশে পুলিশ ভ্যানে করে যাত্রা করলাম। একে তো শীতের সময়, তারমধ্যে এমন এক জায়গা তার নাম আগে শুনিনি। থানায় নিয়ে শুরু হলো আরেক কাহিনি। তাদের ওখান থেকে অর্থাৎ শোরুম থেকে নাকি ১১০ মোবাইল চুরি হয়েছে, তারমধ্যে ৯৩টার আইএমইআই (IMEI) পাওয়া গেছে। তারমধ্যে আমার একটা। তাদের অভিযোগ, সব চোরাই ফোন নাকি আমার কাছে আছে, এ বলে নির্যাতন শুরু করে দিল। স্বীকার না করায় তারা বলল, ১১০টি মোবাইল ফোন ফেরত দিতে, না-হয় ১৫ লাখ টাকা দিতে। তারা এই টাকা বাদীকে দেবে। এই পুরো সময়টা বাদী থানার মধ্যেই ছিল আর হাসছিল।

নিজের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে এমন একটা বিপদে পড়ব, তা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার বাড়ির কেউ জানে না এটা টাঙ্গাইলের কোথায়। আমাকে গুম করল, নাকি অন্যকিছু করল, কেউ জানে না। টানা দুই দিন থানার হাজতে আটকে রাখা হলো আর ভয়ভীতি দেখাল। অন্যান্য মামলায়ও নাম দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।

এদিকে হাজতের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, সেখানে একটা কুকুরও থাকার মতো পরিবেশ নেই। টয়লেট সেখলে যে কেউ বমি করে দেবে। তারপর দুইদিন পর কোর্টে চালান দিলো। সেখান থেকে টাঙ্গাইল কারাগারে প্রেরণ। সে এক আজব দুনিয়া। সেখানে সব ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের দেখা যায়। সাতদিন একটা ঘরে বন্দি করে রাখা হলো কোয়ারেন্টিনের নামে। এক রুমে ৭০ জন করে, এককাতে ঘুমাতে হয়, নড়াচড়ার সুযোগ নেই। তারমধ্যে খাবার দেয় মুলা আর শালগম। গরম পানিতে সিদ্ধ করা তরকারি। মোটা চালের ভাত, যার মধ্যে পচা গন্ধ আর পোকা। আর একবেলা পাঙাশ মাছ, তারও আবার খুবই ছোট পিস। তার সাত দিন পর কোর্টে জামিন শুনানি হয়। সেখানে পুলিশ রিমান্ড চায়, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদ দেয়। অথচ, মামলার আইও জেলগেটে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু আদালতে প্রতিবেদন দেয়, আমরা স্বীকার করেছি ৯৩টা মোবাইল আমাদের কাছে আছে। অতঃপর পুলিশ আবার রিমান্ড চাইলে বিচারক দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একটা খুনের মামলায়ও দুইবার রিমান্ড দেয় না। কিন্তু আমাকে এই মিথ্যা চুরির মামলায় দুইবার রিমান্ড দেওয়া হয়।

এরপর থানায় এনে সেকি অত্যাচার! হাত-পা বেঁধে বেধরক মারধর। ভাই, পুরা জীবনটাই শেষ করে দিছে। ২৩ হাজার টাকার একটা মোবাইল ১৮ হাজার টাকায় কিনে থানা-পুলিশ উকিল সবমিলিয়ে ৫ লাখ টাকা শেষ। তাও আবার দুই মাস জেল খাটার পর। কী আমার অপরাধ? দুই মাস আমার মোবাইল পুলিশের কাছে ছিল, তারা সবভাবে যাচাই করে দেখছে আমি কোনো অপরাধী নই, তবুও এই মামলা থেকে মুক্তি নেই। প্রতিমাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। এদিকে আমার ব্যবসা-দোকান সব শেষ। সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়েছে। আজ আমি পথের ফকির, একটি মোবাইল কিনে জীবনটা নরক হয়ে গেছে। আর কীভাবে যাচাই করে আপনারা পুরাতন ফোন কিনবেন? বক্স আছে ক্যাশমেমো আছে তবুও যদি বলে সবকিছুই ফেক। তাহলে সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে যাচাই করার সুযোগ কোথায়? কীভাবে আপনি নিরাপদ থাকবেন, যদি একটা ফোন কিনে শুনেন আপনি মার্ডার কেসের আসামি? এত প্রযুক্তি আর টেকনোলজি থেকেইবা লাভ কী, যদি পুলিশ প্রকৃত আসামি না ধরে? যার কাছে মোবাইল পেল সেই আসামি? জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন।

কোনো আইনের লোক থাকলে প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন। এই বিপদ থেকে কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?’

 

সূত্র: আরটিভি নিউজ

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana