শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

ভোগাচ্ছে জমে থাকা তাপ

ভোগাচ্ছে জমে থাকা তাপ

ঢাকাবাসীকে ভোগাচ্ছে জমে থাকা তাপ

গাছপালা ও জলাভূমি কমে যাওয়া এবং বায়ুপ্রবাহের জায়গা না রেখে ভবন নির্মাণের কারণে শহরে দিনের তাপ জমা হয়।

ঢাকায় বাতাসের প্রবাহ বেড়েছে। হালকা মেঘের আনাগোনাও আছে। গত দুই দিনে ঢাকার তাপমাত্রা কমেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। তবু ঢাকায় গরমের অনুভূতি খুব বেশি কমেনি। এর কারণ হিসেবে গ্রীষ্মকালে ঢাকায় তাপীয় দ্বীপ বা হিট আইল্যান্ড তৈরি হওয়াকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

মূলত গাছপালা ও জলাভূমি কমে যাওয়া এবং বায়ুপ্রবাহের জায়গা না রেখে ভবন নির্মাণের কারণে শহরে দিনের তাপ জমা হয়। এই পরিস্থিতিকে তাপীয় দ্বীপ বলা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত দিনের তাপপ্রবাহ, যা ঢাকার বাতাসকে আশপাশের জেলার চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত রাখছে।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে এই চিত্র তুলে এনেছেন। ‘ঢাকার তাপীয় দ্বীপের ধরন এবং তাপপ্রবাহের সঙ্গে এর সম্পর্ক’ শীর্ষক গবেষণাটি চলতি এপ্রিলে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব অ্যাটমস্ফেয়ারিক সায়েন্স–এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোরিয়ান মেটেরোলজিক্যাল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা স্প্রিনজার যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে।

এতে দেখা গেছে, একই আবহাওয়াগত অবস্থার মধ্যেও ঢাকা শহরের চেয়ে এর পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। অর্থাৎ ঢাকার বাতাস গরমের পাশাপাশি মাটি, পানি ও সব ধরনের উপাদান সব সময় বেশি গরম থাকছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘গবেষণায় বেরিয়ে আসা এমন তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে এটা পরিষ্কার যে আমাদের গাছপালা বাড়ানো এবং পুরোনো জলাভূমি রক্ষা করে নতুন জলাভূমি সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’

গবেষণাটিতে একটি শহরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বৃক্ষরাজি ধ্বংস হওয়া, জলাভূমি কমে যাওয়া এবং বাতাসের প্রবাহের ব্যবস্থা না রেখে ভবন নির্মাণ করায় শহরগুলোতে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

তাপমাত্রাবিষয়ক গবেষক ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ বলেন, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অনেক শহরে গ্রীষ্মকালে ঢাকার চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ থাকে। কিন্তু ঢাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। আর শহরের খুব কম জায়গায় পার্ক বা বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা আছে। ফলে এই শহরে গ্রীষ্মকালে কোথাও গিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। পরিকল্পিতভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঠান্ডা এবং ছায়াশীতল জায়গা তৈরি করতে পারলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।

অন্য গবেষণাগুলোতেও ঢাকা শহরের সবুজ ও জলাশয় কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছর প্রকাশ করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশে।

ঢাকায় মাত্র ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গাছপালা বা ফাঁকা স্থান রয়েছে, যা ১৯৯৫ সালে ছিল প্রায় ৫২ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে জলাভূমি এলাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটারে, যা ১৯৯৫ সালে ৩০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার ছিল। যদিও একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি থাকার নিয়ম রয়েছে।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বলেন, ঢাকায় এখনো গাছপালা কেটে অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ বন্ধ হয়নি। জলাভূমি ভরাটও চলছে। ফলে নতুন গাছপালা লাগানোর ঘোষণা বা আওয়াজের চেয়ে যতটুকু সবুজ ও জলাভূমি আছে, তা আর ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না, সেই ঘোষণা আসতে হবে।

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়ল

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জারি করা ‘হিট অ্যালার্ট’ বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার সময় আরও তিন দিন বেড়েছে। গতকাল সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য নতুন এই সতর্কবার্তা দেয়। এর আগে ১৯ এপ্রিল তিন দিনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা গতকাল কমে হয়েছে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, আজ থেকে তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে। আসলে এই মাসে তাপপ্রবাহ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

দেশের ৪০টির বেশি জেলার বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ ০১৮৪২২৫৩১২২












All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana