বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা কিছুটা কমায় বিশ্বে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির ছাপ পড়তে শুরু করেছে| কিন্তু এর মধ্যেই আরো একটি ভাইরাস জেঁকে বসার উপক্রম করছে| এর নাম মাঙ্কিপক্স| ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৪টি দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে| ইউরোপের ১০টি দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ও ইসরাইলে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে|
১৯৭০ সাল থেকে আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে| আফ্রিকার বাইরে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এতদিন পর্যন্ত বিরল ছিল| ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে নাইজেরিয়ায়| ইউরোপে এবার প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত হয় ৭ মে| নাইজেরিয়া থেকে ইংল্যান্ড ফেরত এক ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হন বলে জানায় দেশটি| এরপর রোগটি আরো কয়েকটি দেশে শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে| এটি স্পষ্ট যে মাঙ্কিপক্স কোভিডের মতো নয়| তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক| কারণ এই প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক এবং অভূতপূর্ব| যা বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে তুলেছে|
এতদিন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের আচরণ অনুমান করা সহজ ছিল| নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসলে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি পাওয়া যায় ইঁদুরের শরীরে| ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি পশ্চিম আফ্রিকা এবং রেইনফরেস্টে বাস করে এমন কেউ হয়তো আক্রান্ত ইঁদুরের সংক্রমণে এলে অসুখটি ছড়ায়| আক্রান্তদের ত্বকে বসন্েতর মতো দেখা দেয়| ফোস্কার মতো তৈরি হয়ে ফেটে যায় এবং চামড়া উঠতে থাকে| কিন্তু মাঙ্কিপক্স এখন যেসব দেশে শনাক্ত হচ্ছে সেখানে এটি থাকার কথা নয়|
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি খুব অল্পতেই সংক্রমিত করতে পারছে না| দীর্ঘক্ষণের সংস্পর্শ দরকার হচ্ছে| বিশ্বে এর আগে অল্প কিছু সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তবে যাদের শরীরে এটি পাওয়া গেছে তারা সবাই ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি যেসব দেশে সেখানে ভ্রমণে গিয়েছিলেন| কিন্তু এবার যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তা প্রথম বারের মতো এমন সব মানুষের দেহে এটি পাওয়া গেছে যাদের সঙ্গে পশ্চিম অথবা মধ্য আফ্রিকার কোনো যোগাযোগও নেই| ফলে কীভাবে তারা আক্রান্ত হয়েছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়| বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে| বেশির ভাগ আক্রান্েতর শরীরে ঘায়ের মতো পাওয়া যাচ্ছে| আক্রান্তদের অনেকেই সমকামী ও উভকামী কম বয়স্ক পুরুষ| তবে এটিই একমাত্র কারণ তা নয়|
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিজ্ঞান বিষয়ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্যার পিটার হরবি বিবিসিকে বলেন, আমরা খুব নতুন এক ধরনের পরিস্হিতির মধ্যে রয়েছি| যা খুব বিস্ময় এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো| তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় এক কোভিড মহামারিতে পড়তে যাচ্ছি ব্যাপারটা এমন না| তবে ভাইরাসটি জেঁকে বসার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে| মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা দিয়েছেন ডা. হিউ অ্যাডলার| তিনি বিবিসিকে বলেন, এর যে আচরণ আমরা এখন দেখছি তা আগে দেখা যায়নি| যা আশ্চর্য হওয়ার মতো| এখন পর্যন্ত এটুকু জানা যাচ্ছে যে এই প্রাদুর্ভাব ব্যতিক্রমী কিন্তু কেন সেটি জানা যাচ্ছে না| দুটি বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে| হতে পারে ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়েছে| অথবা ভাইরাসটি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সঠিক সময়ে উত্কৃষ্ট পরিবেশ পেয়েছে| তবে মাঙ্কিপক্স কোভিডের মতো এত দ্রুত মিউটেড বা ধরন পরিবর্তন করে না|
ডা. হিউ অ্যাডলার বলেন, গুটি বসন্েতর যুগের চেয়ে এটি সম্ভবত দ্রুত ছড়াচ্ছে| কিন্তু এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে এটি ব্যাপকহারে ছড়াবে| তিনি এখনো মনে করছেন, এই প্রাদুর্ভাব নিজে নিজেই শেষ হবে| বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, মাঙ্কিপক্স পরিচিত ভাইরাস এবং স্মলপক্সের টিকা এর বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে| তবে কীভাবে এই প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে সেটি জানতে পারলে পরে কি হতে যাচ্ছে সেটি অনুমান করা সহজ হবে|
সূত্র :বিবিসি