শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন
সাকিবুজ্জামান সবুর:
বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর বাজারে গ্রামীণফোন, রবি-এয়ারটেল, বাংলালিংক, টেলিটক ও সিটিসেল তাদের আধিপত্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে সেবা ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে তারা। এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একদিকে গ্রামীণফোনের মতো প্রতিষ্ঠানের বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখার চেষ্টা, অন্যদিকে রবি ও বাংলালিংকের দ্রুত সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা চলমান। এদিকে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেল নতুন ভাবে ২৫পয়শা কলরেট নিয়ে বাজারে আসতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে, অপারেটরদের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত নেটওয়ার্ক সেবা, এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। চলুন দেখা যাক, বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের আধিপত্য ও অজানা কিছু তথ্য-
গ্রামীণফোন বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। এর মালিকানা দুইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভক্ত:
1. **টেলিনর গ্রুপ (Telenor Group)**: নরওয়ের টেলিনর গ্রুপ গ্রামীণফোনের প্রধান মালিক। তাদের মোট শেয়ারের প্রায় ৫৫.৮ শতাংশ রয়েছে।
2. **গ্রামীণ টেলিকম (Grameen Telecom)**: ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা গ্রামীণফোনের শেয়ারহোল্ডার। তাদের মোট শেয়ারের প্রায় ৩৪.২ শতাংশ রয়েছে।
গ্রামীণফোন মূলত ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এরপর থেকে বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
বাংলালিংক বাংলাদেশের অন্যতম মোবাইল অপারেটর এবং এর মালিকানা প্রধানত একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির হাতে রয়েছে। বর্তমানে বাংলালিংকের মালিকানা নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক কোম্পানি **ভিওন লিমিটেড (VEON Ltd.)**-এর অধীনে।
### মালিকানা কাঠামো:
– **ভিওন লিমিটেড (VEON Ltd.)**: ভিওন বাংলালিংকের মূল কোম্পানি এবং এর ১০০% শেয়ার ধারণ করে। ভিওন একটি আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
২০০৫ সালে বাংলালিংক তাদের যাত্রা শুরু করে এবং এর পর থেকে বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
রবি ও এয়ারটেল বর্তমানে বাংলাদেশে একটি সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। ২০১৬ সালে এ দুটি কোম্পানি একীভূত হয় এবং এখন এটির নাম **রবি আজিয়াটা লিমিটেড (Robi Axiata Limited)**। এ কোম্পানির মালিকানার কাঠামোতে প্রধান দুই অংশীদার রয়েছেন:
### মালিকানা কাঠামো:
1. **আজিয়াটা গ্রুপ বেরহাদ (Axiata Group Berhad)**: মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ রবির মূল শেয়ারহোল্ডার। বর্তমানে আজিয়াটা গ্রুপ রবির প্রায় ৬১.৮২% শেয়ারের মালিক।
2. **ভারতি এয়ারটেল লিমিটেড (Bharti Airtel Limited)**: ভারতের ভারতি এয়ারটেল এই একীভূত প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৮.১৮% শেয়ারের মালিক।
3. **অন্যান্য শেয়ারহোল্ডার**: বাকী প্রায় ১০% শেয়ার পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের কাছে রয়েছে।
রবি এবং এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
টেলিটক বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর। এর মালিকানা পুরোপুরি **বাংলাদেশ সরকারের** হাতে।
### মালিকানা কাঠামো:
– **বাংলাদেশ সরকার**: টেলিটক ১০০% সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
টেলিটক ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম খরচে টেলিকম সেবা পৌঁছে দেওয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি প্রোগ্রাম, যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেলিটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সিটিসেল বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর এবং এটি দেশটির একমাত্র সিডিএমএ (CDMA) প্রযুক্তি-ভিত্তিক মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। সিটিসেলের মালিকানা প্রধানত দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভক্ত ছিল:
### মালিকানা কাঠামো:
1. **প্যাসিফিক গ্রুপ (Pacific Group)**: বাংলাদেশি প্যাসিফিক গ্রুপ সিটিসেলের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার ছিল।
2. **সিঙ্গাপুর টেলিকম (Singapore Telecommunications Ltd বা Singtel)**: সিঙ্গাপুরের এই টেলিকম কোম্পানি সিটিসেলের আরেকটি বড় শেয়ারহোল্ডার ছিল।
সিটিসেল ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরে সেবা দিয়ে আসছিল। তবে ২০১৬ সালে লাইসেন্স বাতিলের কারণে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সিটিসেল বর্তমানে বন্ধ রয়েছে তবে তারা খুব শীগ্রই ২৫ পয়শা মিনিট নিয়ে ফেরার চেষ্টা করছে।