শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীরউত্তম রাজাপুর থানায় মামলা দিতে গিয়ে বিএনপির অফিস হামলা ভাংচুরের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠোনা হয়েছে। রাজাপুর থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, কাঁঠালিয়া বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত বুধবার রাতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর বাদী হয়ে শাহজাহান ওমরসহ ৯জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন। শাহজাহান ওমর রাজাপুরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে তিনি গাড়িতে করে বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল থেকে রাজাপুরে যাওয়ার পথে পিংড়ি এলাকায় দূর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা তার ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করে। পরে ভাঙা গাড়ি নিয়ে তিনি রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দুপুরে তাকে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক আফরোজা বিনতে শহিদ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বুধবার রাত ৮ টার দিকে রাজাপুর উপজেলা সদরের গোডাউনঘাট এলাকায় শাহজাহান ওমরের বাসভবন মেহজাবিন হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বত্তরা। এতে বাসভবনের তিনটি জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। এ খবর শুনে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে বরিশালের বাসা থেকে শাহজাহান ওমর তার গাড়ি নিয়ে রাজাপুরে আসার পথে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পিংড়ি এলাকায় আসল তার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বত্তরা। এ ঘটনার পর শাহজাহান ওমর রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে যান। শাহজাহান ওমর থানায় এসেছেন এ খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা থানার সামনে বিক্ষোভ করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, থানার বাইরে অবস্থান নেওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয় এবং কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলার ০১নং আসামী হিসাবে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
ঝালকাঠি কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক পুলক চন্দ্র রায় বলেন, শাহজাহান ওমর সাহেবকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আফরোজা বিনতে শহীদের আদালতে তোলা হলে তার পক্ষে কোন জামিন আবেদন এবং পুলিশের পক্ষে কোন রিমান্ড প্রার্থনা না থাকায় খুব দ্রুত তাকে সি ডব্লিউমূল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
আদালতে নেওয়ার পথে শাহজাহান ওমর অভিযাগ করেন, আমি সাংগর গ্রামের বাড়িতে বোনের কবরস্থানে কাজ করাতে এসে হামলার শিকার হয়েছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের নেতৃত্বে আমার বাড়ি ও গাড়িতে হামলা হয়েছে। ইচ্ছে ছিলো লেবুখালী ক্যান্টেনমেন্টে স্বশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। কিন্তু এখন তো আমার গাড়ি নাই, কিভাবে সেখানে যাবো। আমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় থানায় আসছিলাম মামলা দিতে। পুলিশ বলছে, কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আমি মামলার বিষয়ে জানতাম না।’ আমি এসব মামলায় ভয় পাই না। আমি আবারো এই দেশে এমপি-মন্ত্রী হবো লিখে রাখেন।
এ ব্যাপারে উপজলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, কারা তার (শাহজাহান ওমর) বাসভবন ও গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করেছে, তা আমার জানা নেই। যে মামলায় শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেই মামলার বাদী কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম। মামলার ধারা ১৪৭, ১৪৮, ৪৪৯, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৭, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০৬। বুধবার গভীর রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় দাবি করা হয় ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির অফিস শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে আরও ৮জন নামধারী আসামী হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তিন লাখ টাকার ক্ষতি সাধণকরে।
উল্লখ্য, বিএনপির মনোনয়োন চারবার ঝালকাঠি-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহজাহান ওমর। হয়েছেন প্রতিমন্ত্রীও। গত ১/১১ সরকারের সময় আত্মগোপনে থাকাকালে দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ শাহজাহান ওমরের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দীর্ঘদিন সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। দুর্নীতির মামলার রায় স্থাগিত রাখাসহ নতুন করে মামলা-মোকাদ্দমা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে গোপনে আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন।
ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির যুগ্নসম্পাদক শামীম আলম বলেন, ঝালকাঠির লাখো বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে বেঈমানি করে তিনি আওয়ামী লীগে চলে গেলেন। এ অঞ্চলে ওস্তাদ খ্যাত ওমরের এক সময়ের শিষ্যরা আজ আদালতে আনা নেয়ার সময় ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে তাকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।