ঝালকাঠি জেলায় সমন্বিত কৃষি ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় কৃষক পর্যায় ক্রয় করা কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন মাঠ পর্যায়ে কৃষকের ধান কর্তন করছে। বানিজ্যিকভাবে এই মেশিনের সাহায্যে ঘন্টায় ১ একর জায়গার ধান কর্তন, মাড়াই-ঝাড়াই হয়ে বস্তাভর্তি করা যায়। ফলে ধান কাটার কৃষান মজুরী সাশ্রয় হয়, অল্প সময়ের মধ্যে বেশী জমির ধান কাটা যায় এবং বাড়িতে নিয়ে ঝাড়াই-মাড়াই করার প্রয়োজন হয় না। কৃষক ধান বস্তাবন্দী করে মাঠ থেকেই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছেন। কম সময়ে মেশিনে ধান কেটে মাড়াই করে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে কৃষক হুমাউন কবির। ঝালকাঠি সদর উপজেলায় বাসন্ডা ইউনিয়নের আগবাড়ি গ্রামের আদর্শ কৃষক হুমাউন কবির ব্যাক্তিগত উদ্যোগে প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে এই যন্ত্র কিনেছেন। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ লাখ টাকা মুল্যের যন্ত্রটির জন্য সরকার ৫০% হারে ১৪ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছেন। হুমাউন কবির নিজের জমির ধান কাটার পরে মেশিনটি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে লাভবান হতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে দাবী করা হয়েছে কৃষিবিভাগ কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদের জন্য যান্ত্রিকিকরণের বিষয় উৎসাহ দিচ্ছেন এবং সরকার কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য কৃষকদেরকে ৫০-৭০% ভর্তুকি দিচ্ছে। গত ২১ এপ্রিল কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন ক্রয় করে এনে ২৩ এপ্রিল থেকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে ধান কাটা শুরু করেছেন। গত ১৫ দিনে হুমাউন কবির আড়াই লাখ টাকা আয় করেছেন।
হুমাউন কবিন জানান, বিভিন্ন এলাকায় মেশিন নিয়ে গিয়ে ৫০ একর জমির ধান কেটেছেন। তার ধান কাটার এই ব্যবসায় মেশিন চালনাসহ ৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি একর প্রতি একরে ধান কাটার জন্য ৮ হাজার টাকা করে নেন। হুমাউন কবির জানান, ১ একর জমির ধান কাটার জন্য ১ হাজার টাকার প্রায় ১২ লিটার জ¦ালানি তেল খরচ হয়। তার কাছে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগরবাড়ি গ্রামের নাসির উদ্দিন হাওলাদারের এই মেশিন দিয়ে ধান কর্তন করা হচ্ছিল। ধান কাটা দেখার জন্য এই এলাকার কৃষক পরিবারের বিভিন্ন বয়সের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, এই মেশিন দিয়ে ধান কাটায় তার কৃষান খরচের চেয়ে অর্ধেক টাকা লেগেছে এবং সময় ও ঝাড়াই-মাড়াইয়ের জন্য খরচ সাশ্রয় হয়েছে। একই এলাকার বর্ষিয়ান কৃষক জানান, এলাকায় ধান কাটার জন্য কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না এবং তাদের দিয়ে ধান কাটার খরচ অনেক বেশি। এই ধরনের মেশিন ব্যবহার করে কৃষকরা সুবিধা নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো: ফজলুল হক জানান, কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক চাষাবাদের জন্য যান্ত্রিকিকরণের বিকল্প নেই। ঝালকাঠি জেলায় বোরো মৌসুমের আবাদের ৭৫ ভাগ কর্তন শেষ হয়েছে। কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে কৃষক একই সঙ্গে ধান কাটার সাথে সাথে মাড়াই-ঝাড়াই হয়ে বস্তাবন্দি হয়ে বেড়িয়ে আসছে। এতে কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াই খরচের সাশ্রয় হচ্ছে। ধান কাটার সময় কম লাগছে। এই যন্ত্রটি কৃষকের সহায়ক।