বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় শীতের আগমনের সাথে সাথেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গাছিরা। প্রতিদিন বিকেল হলেই গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য খজুর গাছের মাথার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় মাটির কলসি, হাড়ি বা প্লাষ্টিকের বোতলে রস সংগ্রহের জন্য ঝুলিয়ে রাখেন। আবার সূর্য্যদয়ের সাথে সাথে গাছ থেকে মাটির কলসি, হাড়ি বা প্লাষ্টিকের বোতল রসসহ সংগ্রহ করেন।
উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বিনাপানি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একজন গাছি রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ ঝাড়ার কাজ করছেন। ব্যস্ততার মধ্যেও তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয়। ওই গাছির নাম তোতা মিয়া হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘শীত শুরুর আগেই আমরা খেজুর গাছ কাটা শুরু করি। তবে এ বছর কিছুটা দেড়ি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫/৬টি গাছ কেটেছি। রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এখন গাছ ঝাড়ার কাজ করছি এরপর রস সংগ্রহ শুরু করবো।
একই ইউনিয়নের গাছি খালেক মিয়া বলেন, ‘খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশ ঝেড়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ অল্প অল্প করে কেটে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় হাড়িতে রস সংগ্রহ করতে হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের মশাবুনিয়া, হেতালবুনিয়া, চিংড়াখালী গ্রামের কয়েকজন গাছি বলেন, ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই আমরা কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়। প্রতিদিন বিকেলে হলে গাছে গাছে ছোট-বড় হাড়ি বাঁধি আবার অতি ভোরে রসসহ হাড়ি সংগ্রহ করি। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন।
আমুয়া ইউনিয়নের গাছি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে থাকি। বছরের শীতের সময়টায় কয়েক মাস আমরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবো।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সামাজিক আন্দোলন কাঠালিয়ার সভাপতি তুহিন সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তার যতœ করা।’
কাঠালিয়া সদরের দন্ত চিকিৎসক মো. সাইফুল সরদার বলেন, আগের মতো গ্রামে এখন আর তেমন খেজুর গাছ নেই। পেশাদার গাছির সংখ্যাও কমে গেছে। এক সময় আমাদের গ্রামে অনেক খেজুর গাছ দেখা যেত এবং অনেক রস কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন অনেক খুজেও রস পাওয়া যায় না। সরকারি সড়কের দু’পাশে যদি পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ লাগানো হয় তাহলে প্রতি বছর খেজুর গুড় বিক্রি করে সরকার প্রচুর টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। এবং এ উদ্যোগ সরকারী ভাবেই নেয়া উচিৎ।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. হাছিবুর রহমান বলেন, শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খেজুর গাছ ফসলের কোনো প্রকারের ক্ষতি করে না। এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। বর্তমান সময়ে খেজুর গাছ ও গাছির সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। তার পরেও যারা খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন কৃষি অফিস থেকে তাদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি।