শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
বার্তা ডেস্ক:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমিত সাহা একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে নিকট আত্মীয়, বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে লাখ লাখ টাকা পাঠানোর চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ােগেছে। এসিল্যান্ড সুমিত সাহা কাঠালিয়ায় যোগদানের পর থেকে ভূমি অফিস দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করে কাঠালিয়া থেকে প্রতি মাসে ৫-৭ লাখ টাকা বিভিন্ন একাউন্টে পাঠান তারই অফিসের কর্মচারী নাজির কাম ক্যাশিয়ার মো. মাঈনুল ইসলাম।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সিবানী সাহা, যমুনা ব্যাংক লিঃ, হিসাব নম্বর-০০৮৭০৩১০০০৮৬১৯ এ গত ২৪ জানুয়ারি তারিখে ২ লাখ টাকা, একইদিন রবিন সাহা, ওয়ান ব্যাংক লিঃ, হিসাব নম্বর-০১৫২০৫০০২৫৩৭৪ ১ লাখ টাকা, ২১ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ব্র্যাক এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ১৫০৩২০৩৬২৯৪২৪০০ হিসাব নম্বরে পাঠানো হয়েছে। যার রিসিভ নম্বর ৪০৪৩২৯২৬৪৩৫৫। এ ছাড়া সুমিত সাহা, ডাচবাংলা ব্যাংক লিমিটেড ও নাজ প্রোপারির্টিজ, ব্র্যাক লিমিটেড হিসাব নম্বর-১৫০৩২০৩৬২৯৪২৪০০১ এ সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঘুষের টাকা লেনদেন করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
অতি সম্প্রতি ভ্রম্যমান আদালতের ভয় দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসক এসিল্যান্ড সুমিত সাহা ও নাজির মাইনুলকে শোকজ করেন। ২৮ জানুয়ারী জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলীর স্বাক্ষরিত তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ শোকজের জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক অফিসের স্মারক নং ৩১.১০.৪২০০.০১২.০৪.০২৬.১৮-১০১, তারিখঃ ২৮ জানুয়ারী ২০২১ কারন দর্শানো নোটিশে উল্লেখ রয়েছে মোবাইল কোর্টকে যেমনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি প্রশাসন ক্যাডারের ভাবমূর্তিও ভীষণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। আপনি এর দায়ভার কোনো ভাবেই এড়াতে পারেন না। আপনার এহেন কর্মকান্ড সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের সামিল। এমতাবস্থায়, আপনার এহেন কর্মকান্ডের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে সুপারিশ করা হবে না তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ০৩ (তিন ) কার্যদিবসের মধ্যে (০২ ফেব্রুয়ারী) দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।
উল্লেখ্য যে, গত ২৫ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে কাঠালিয়ার মেসার্স ত্বহা ব্রিকস ফিল্ডে এসিল্যান্ড সুমিত সাহা, তার অফিসের নাজির মাঈনুলসহ অন্যান্য কর্মচারী, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্য নিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় নানা অভিযোগ তুলে ইট ভাটার পার্টনার (মালিক) মোঃ শাহিন আকনের কাছে দশ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে ক্ষুদ্ধ হয়ে ভাটার মূল মালিক মোঃ এনামুল হকের শ্বশুর হাবিবুর রহমান ও কর্মচারী মফিজুলকে আটক করে কাঠালিয়া এসিল্যান্ড কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে পার্টনার (মালিক) শাহিন আকন প্রথমে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা কাঠালিয়াস্থ এসিল্যান্ড সুমিত সাহার অফিসে গিয়ে তাকে দেন। টাকা কম হওয়ায় সে আরও ক্ষিপ্ত হয়। পরে শাহিন এসিল্যান্ডের কাছ থেকে এক ঘন্টা সময় নিয়ে আবার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে এসে মোট চার লক্ষ টাকা সুমিত সাহাকে পৌছে দেন। টাকা পাওয়ার পরে আটকৃত দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। টাকার রশিদ চাওয়া হলে সুমিত সাহার স্বাক্ষরিত মামলার (নম্বর ০৫/২০২১ইং) আদেশে (ক্রমিক নং ৪৮০৮২৩) এর দুই লক্ষ টাকার একটি রশিদ বাটার পার্টার (মালিক) শাহিনকে ধরিয়ে দেয়া হয়। অন্য দুই লক্ষ টাকা কথা জানতে চাইলে তাকে ধমকিয়ে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ০৮ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সুমিত সাহা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কাঠালিয়া উপজেলায় যোগদান করেন।
আরো পড়ুন: ফের এসিল্যান্ড ও নাজিরের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ জণপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে