রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
গত ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের জন্য ইলিশ নিধন, বিক্রি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঝালকাঠিতে চলছে কিছুটা ব্যাতিক্রম। খোদ মৎস্য অফিসের যোগসাজসে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক জেলেরা নদীতে মা ইলিশ নিধন অব্যাহত রেখেছে। এদের মধ্যে মৌসুমী জেলের সংখ্যাই বেশি।
নিষেধাজ্ঞা শুরু থেকে গেলো এক সপ্তাহে সরজমিন অনুসন্ধানে যা পাওয়াযায় বিষখালী নদীর ভবানীপুর, চাঁদপুরা, হদুয়া লঞ্চঘাট, পুরান হদুয়া বাজার, নলবুনিয়া,, ইসলামপুর, তেতুলবাড়িয়া লঞ্চঘাট ও সুগন্ধা নদীর মগড় জাঙ্গালিয়া ইটভাটা, অনুরাগ, দপদপিয়া, মাটিভাঙা এলাকায় শতাধিক মানুষ সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে লক্ষাধীক মিটার জাল নিয়ে পৃথকভাবে ইলিশ নিধনের মহোৎসবে মেতেছে। যা মধ্য রাতে দৃশ্যমান থাকে। অনেকে বলছেন অসাধূদের ইলিশ নিধনের বিষয়টির সাথে জেলা ও উপজেলার মৎস্য অফিসও জড়িত। নিষেধাজ্ঞার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কিছু জাল জব্দ এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দু’জনকে কারাদন্ড দেয়া ছাড়া তেমন কোনো সাফল্য নেই মৎস্য অফিসের। তারা নামমাত্র অভিযান, ফটোসেসনসহ তাদের দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নলছিটির তেতুলবাড়িয়া এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শুরুর দিন থেকেই বিষখালী নদীর ভবানীপুর, ইসলামপুর, তেতুলবাড়িয়া লঞ্চঘাট ও সুগন্ধা নদীর মগড় জাঙ্গালিয়া ইটভাটা, অনুরাগ, দপদপিয়া, মাটিভাঙা এলাকায় চলছে অবাধে মা ইলিশ মাছ নিধন। অভিযানে নামার আগাম খবর পেয়ে যায় জেলেরা। এর পরই শুরু হয় মৎস্য দপ্তরের লোকেদের সাথে লুকোচুরি খেলা’
নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি গ্রামের জুয়েল হাওলাদার বলেন, ‘শতাধিক ডিঙ্গি নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নদীতে। মৎস্য অফিসের অভিযানের ট্রলার আসার আগেই এরা নৌকা নিয়ে ছোটো ছোট খালে আত্ম গোপনে চলে যায়। অভিযানের লোকেরা চলে গেলে তারা আবার নৌকা নিয়ে নদীতে প্রবেশ করে।’ অসাধূ জেলেদের সাথে মৎস্য অফিসের লোকদের যোগসাজস রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জুয়েল।
ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নান্টু সেলিম বলেন,’তালিকাভুক্ত (কার্ডধারী) অনেক জেলে নিজে নদীতে না নেমে মাছের ভাগের বিনিময়ে নৌকা ও জাল দিয়ে মৌসুমি জেলেদের সহযোগিতা করছেন। আবার এলাকার কিছু লোক নৌকা কিনে মৌসুমি জেলেদের কাছে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। আর মৎস্য অফিসের লোকজন সারাদিন নির্দিষ্ট একটি গন্ডির মধ্যে ট্রলার নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিছু জাল ধরে ফটোসেসন করে চলে যায়।’
নদীতীরের বাসিন্দা অনেকেই জানালেন, ‘মৎস্য অফিসের সাথে যারা লিয়াজো না করে তাদেরকেই ধরা হয়। আর লিয়াজোকারীরা লুকোচুরির মতো খেলায় দিন কাটিয়ে মা ইলিশ নিধন উৎসব করছে।
জাল তোলার পর মাছ নৌকা থেকে নামিয়ে নদীর তীরের ঝোঁপ-জঙ্গলে ও কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখছে। এসব ইলিশ সস্তায় কিনতে দূর-দূরন্ত থেকে ক্রেতারা আসছে প্রতিদিন।’
খেয়াঘাটে দায়িত্বরত অনেকে জানালেন, ‘পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট নদীতে অভিযানে নামলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলফোনে অসাধূ জেলেদেরকে খবর জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে বেশ কিছু লোক। বিনিময়ে প্রত্যেককে ৫০০-৬০০ টাকা করে প্রতিদিন দেওয়া হয়। এদের কাজ হলো নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং নদীতে প্রশাসন অভিযানে নামলেই মা ইলিশ নিধনকারী মৌসুমি জেলেদের সাবধান করে দেওয়া। কারন মৎস্য কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তাদের হিমধরা আতংক।
গনমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন জেলে জানান, ‘বর্তমানে প্রচুর ইলিশ জালে উঠছে। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি নিরাপদ। তাই রাতেই বেশি জাল ফেলছেন। ইলিশ বিক্রির জন্য কোনো চিন্তা করতে হয় না। ক্রেতারা নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন মাছ কেনার জন্য। কিছু ক্রেতা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। ফোন দিলেই তারা এসে মাছ নিয়ে যায়’
অসাধূ জেলেদের সাথে অসাধূ উপায়ে লিয়াজো রাখা সহ সকল অভিযোগ অস্বিকার করে এ প্রতিবেদককে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম মুঠো ফোনে বলেন, ‘যখন যেখানে জাল ফেলার সংবাদ পাচ্ছি তখনই সেখানে অভিযান চালাচ্ছি। আমরা যেভাবে গোপন খবর পেয়ে অভিযানে ছুটেযাই ঠিক তেমনি আমাদের অভিযানের তথ্যটিও অসাধু জেলেদের কেউ খবর দিয়ে দেয়। তাই অনেক সময় ব্যাটে বলে মিলেনা। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। আবার আমাদেরকে ফোন করে ভুল তথ্যও দিচ্ছে অজ্ঞাত লোকজন। ভুল তথ্যের কারনে অভিযানেও ব্যঘাত ঘটছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘৬৩ কিলোমিটার নদীর ৮ পয়েন্টে আমরা আলাদা নজর রাখছি। মৎস্য অফিসের অভিযান বা টহল টিম নির্ধারিত গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, পুরো এলাকায়ই টহল দেয়া হচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’ একই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম কুমার।