রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

শেবাচিমে সেবা চাওয়ায় কিশোরকে পিটিয়ে মামলা দিলেন চিকিৎসকেরা

শেবাচিমে সেবা চাওয়ায় কিশোরকে পিটিয়ে মামলা দিলেন চিকিৎসকেরা

শেবাচিমে সেবা চাওয়ায় কিশোরকে পিটিয়ে মামলা দিলেন চিকিৎসকেরা

অনলাইন ডেস্ক:

ব্রেইন স্ট্রোক করার পর শাজাহান রাঢ়ি (৭০) নামের এক বৃদ্ধকে গতকাল সোমবার দুপুরে ভর্তি করা হয় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম)। বিকেল গড়ালেও সেবা মিলছিল না। এ নিয়ে উত্তেজিত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ডাক্তারদের হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনায় জড়িত রোগীর জামাতাকে না পেয়ে রোগীর নাতি জিহাদ হাওলাদারকে (১৪) ধরে বেদম মারধর করে পুলিশে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাতেও ক্ষান্ত হননি। ৯ম শ্রেণির ছাত্র জিহাদ এবং তার খালু মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন চিকিৎসক ডা. তারিকুল ইসলাম। স্বজনদের অভিযোগ, থানায় ওই ডাক্তারের পা ধরে মাফ চাইলেও রেহাই পায়নি কিশোর জিহাদ।

জানা গেছে, উজিরপুরের সাবেক ইউপি সদস্য মুমূর্ষু শাজাহান রাঢ়ি এখন ঢাকায় নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আর ছাত্র জিহাদকে রাতভর থানায় রেখে পরদিন পুলিশ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। জিহাদ নগরের কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ডে পুলিশভ্যানে তোলার সময় দেখা হয় কিশোর জিহাদ হাওলাদারের সঙ্গে। করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিহাদ জানায়, স্ট্রোক করায় তার নানার অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু ডাক্তার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও চিকিৎসা দেয়নি। এ নিয়ে তর্ক হয়েছে। পরে ডাক্তাররা তাকে ধরে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে বলে জানায় জিহাদ। ওই সময় জিহাদের মাকে থানায় ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। পরে পুলিশভ্যানের পিছু পিছু আদালতে ছোটেন জিহাদের মা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর স্বজন বিবাদীরা হয়তো হাসপাতালে মাথা গরম করেছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়েছে। মামলায় মো. জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি এবং জিহাদ হাওলাদার নামে ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রকে আসামি করেছেন বাদী ডা. তারিকুল ইসলাম। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। গ্রেপ্তার জিহাদকে আদালতের মাধ্যমে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।’

সোমবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার দ্বিতীয় তলায় গিয়ে মামলার বাদী ডা. তারিকুল ইসলামের পা জড়িয়ে ধরেন ছাত্র জিহাদের খালা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারী বলেন, ডা. তারিকুলের সঙ্গে থাকা কয়েক প্রভাবশালী লোক তাঁর গায়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। পা ধরে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা না করার অনুরোধ জানালেও তাঁরা সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করেন। গায়ে হাত দেওয়ায় তিনি নারী নির্যাতন মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

ওই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, তাঁর বাবা শাজাহান রাঢ়ি মৃত্যুর পথে। তার ওপর বোনের বাচ্চা ছেলে থানায়। ডাক্তাররা এত নির্দয় যে, পা ধরেও নিস্তার পাননি। শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় সোমবার গভীর রাতে তাঁর বাবাকে ঢাকা নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। আর কিশোর বয়সী জিহাদের পেছনে ছুটছেন তাঁর মা।

জানতে চাইলে ডা. তারিকুল ইসলাম বলেন, তিনি থানায় মামলা করেছেন। মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত আছেন। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে তারপর তিনি গণমাধ্যমে কথা বলবেন।

একজন কিশোরকে কেন আসামি করলেন—জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উজিরপুর থেকে স্ট্রোকের মুমূর্ষু রোগী নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই রোগীকে দেখার সময় এক স্বজন ভিডিও করার একপর্যায়ে তর্কবিতর্ক হয়। উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়। এ সময় মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তারিকুল ইসলামকে মারধর করে। পরে ওই ডাক্তারের লোকজন এসে থানায় মামলা করেছে।’

পরিচালক আরও বলেন, ওই মুহূর্তে যাকে পাওয়া গেছে তাকেই পুলিশে দেওয়া হয়েছে। সে কিশোর কি না তা পুলিশ এবং আদালত বুঝবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

সম্পাদকীয় কার্যালয়: কাঠালিয়া বার্তা
কলেজ রোড, কাঠালিয়া, ঝালকাঠি।
মোবাইল: 01774 937755









Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana