বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
জিয়াউল হাসান পলাশ, ঝালকাঠি:
ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরী ২০১৯ সালে উদ্বোধনের পর প্রায় পাঁচ বছরে ধরে বলতে গেলে ফাঁকাই পড়ে আছে। ৭৯টি প্লটের মধ্যে ৫৬টিই ফাঁকা। এর মধ্যেও প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দেউলিয়া কোম্পানির নামে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলা বিসিকের কোনো সুপারিশ ছাড়া দেউলিয়া হওয়া ফরচুন ইনভেনশন অ্যান্ড টেকনোলজি নামে একটি কোম্পানিকে ২৫টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেগুলো ফাঁকাই পড়ে আছে। এ ছাড়া আরও ছয়টি প্লট নিয়ে তিনজন উদ্যোক্তা আসেননি। গত বছর তারা প্লটের বরাদ্দ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। চলতি বছর জানুয়ারিতে তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়। জেলা বিসিকের কাগজপত্র অনুযায়ী আরও ছয়টি প্লট ফাঁকা। এর বাইরে আরও ১৯টি প্লট ১৫ উদ্যোক্তাকে চলতি বছরের জুনে বরাদ্দের কথা জানানো হয়েছে। যদিও তারা এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সব মিলিয়ে ৫৬টি প্লট ফাঁকা। ফলে এখানে এলাকায় বেকারদের কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলায় শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়েনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠির বিসিক শিল্পনগরীতে ২৫টি প্লট বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানি ফরচুনকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে স্থানান্তর করা হয়ছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বিগত সময়ের অনিয়ম-দুর্নীতি ও কারসাজির ঘটনা খতিয়ে দেখতে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বরিশাল বিসিকে জমি বরাদ্দ নিয়ে ২০১২ সালে ফরচুন শুজের কারখানা স্থাপন করেন মিজানুর রহমান। কিন্তু দেউলিয়াত্বের কারণে বরিশাল বিসিকের কারখানাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ঝালকাঠি বিসিকের এক ব্যক্তিকে ২৫টি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার এখতিয়ার বা নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে শিল্পনগরী কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, এ রকম কোনো বিধান নেই। বিসিকের নীতিমালায় এ বরাদ্দ অযৌক্তিক বলেই আমরা তাদের আবেদনে সুপারিশ করিনি। এমনকি বিসিক প্রধান কার্যালয় থেকেও এই বরাদ্দের বিরোধিতা করা হয়েছিল। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ২৫টি প্লট বরাদ্দের জন্য একটি পৃথক কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল বিসিকের মতামতের তোয়াক্কা না করে শিল্প সচিব প্লট বরাদ্দ দেন। এই প্লট বরাদ্দের জন্য ১২ কিস্তিতে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ধার্য করা আছে। ১০ শতাংশ হিসাবে দুই কিস্তির টাকা জমা নিয়ে প্লট বরাদ্দ নিয়েছে তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিসিক শিল্পনগরীতে সাতটি কারখানা চালু আছে। এসব কারখানার উদ্যোক্তারা জানান, তারা এখানে এলেও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। রাতে নগরীর ভেতরে কোনো পোস্টে লাইট না থাকায় ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে। সন্ধ্যার পর বসে মাদকের আড্ডা।
সুন্দরবন পলিমার কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা এখানে উৎপাদন শুরু করেছে দুই মাস আগে। শুরুতেই খাম্বা থেকে কারখানার তিন লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার কেটে নিয়ে যায়। পরে নিজ খরচে প্রায় চার লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যুতের লাইন নিতে হয়েছে। ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক আলী আসগর নাসির বলেন, ফরচুনের নামে প্লট বরাদ্দের সময় আমি ছিলাম না। চুরি ও মাদক প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।