রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
তামজিদ হোসেন (২৭) নামের এক তরুণকে আটক করেছিলেন র্যাবের সদস্যরা। এরপর মুঠোফোনে তাঁর বোনকে বলেছিলেন তামজিদকে ‘ক্রসফায়ারেও দেওয়া হতে পারে।’ ‘ভাইকে বাঁচাতে হলে দুই কোটি টাকা রেডি’ করতে বলা হয়। কোনো টাকা নেই জানালে ‘১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে’ যেতে বলা হয় বোনকে।
অপহরণ করে টাকা আদায়ের অভিযোগে এক নারী ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) চার সদস্যকে আজ শুক্রবার গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানা–পুলিশ। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর তিনজন ও বিমানবাহিনীর একজন সদস্য রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য পলাতক রয়েছেন। অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ল্যান্স করপোরাল দুলাল মৃধা, সৈনিক রোকন মিয়া, ল্যান্স করপোরাল মো. রনি ও সৈনিক সাগরকে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে হাতিরঝিল থানা-পুলিশ। আর রানু বেগম নামের ওই নারীকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অপহরণ করে মুক্তিপণ নেওয়ার অভিযোগে ৪ র্যাব সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, এই অপহরণ চক্রে মোট ছয়জন সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন হলেন সেনাবাহিনীর, একজন বিমান বাহিনীর, একজন বিজিবির ও আরেকজন সাধারণ মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে বিজিবির সদস্য ও সাধারণ নাগরিক পলাতক রয়েছেন।
হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাইয়ানা হোসেন নামের এক তরুণী অভিযোগ করেন তার বড়ভাই তামজিদ হোসেন (২৭) তাদের মীরবাগের বাসা থেকে ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় উত্তরায় যাওয়ার কথা বলে বের হন। আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানান তার ভাই তামজিদ র্যাবের হেফাজতে আছেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে তার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে- একথা বলে ফোন কেটে দেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি।
রাইয়ানা অভিযোগে বলেন, আমি পরে অনেকবার ফোন করলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি রিসিভ করেননি। পরে আনুমানিক দুপুর দেড়টায় ফোন রিসিভ করে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান আমার ভাইকে র্যাবের সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।
রাইয়ানা অভিযোগে বলেন, আমার ভাইকে র্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন জানতে চাইলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান, এই মুহূর্তে আমার ভাই কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন। এর কিছুক্ষণ পর র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে তাদের সহযোগীদের দ্বারা মারধরের শব্দ শােনান এবং আমার ভাইকে মোবাইল ফোন দিলে আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়। পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি না, আমার কাছে জানতে চায়। আমি তাদেরকে বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? একপর্যায়ে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে রাজধানীর একটি অভিজাত মার্কেটে যেতে বলে। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল করে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বলে। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে সে পুনরায় জানায় তার হাত-পা ও চোখ বাঁধা। সে কোথায় আছে বলতে পারবে না।