মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
সাকিবুজ্জামান সবুর:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় হঠাৎ করে দুই-তিন দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৪ ঘন্টায় (শনিবার বিকাল ৪টা থেকে বরিবার বিকাল ৪টা) ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন। গত এক সপ্তাহে ৫৭ জন রোগী কাঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এছাড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, কাঠালিয়া সদর ও আওরাবুনিয়া ২টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটে রোগীদের সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় ওয়ার্ড, ওর্য়াডের মেঝে ও করিডোরের মেঝসহ হাসপাতালের সিঁড়িতে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এদিকে হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন ও ডায়রিয়া চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ইনজেকশন ও ওষুধ না থাকায় রোগীরা চরম ভোগান্তীর শিকার। এমনকি স্থানীয় বাজারের ওষুধের দোকানেও কলেরার স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।
সরজমিনে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেড না থাকায় ওয়ার্ড, ওর্য়াডের মেঝে ও করিডোরের মেঝেসহ হাসপাতালের সিঁড়িতে বিছানা পেতেছেন। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। মেঝের নোংড়া ও অপরচ্ছিন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। এছাড়া বরিবার বিকাল ৩টায় হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল অফিসার ডা: ইমরান খান ও সহকারি মেডিকেল অফিসার মো. জাহিদ হোসেন ছাড়া আর কোন চিকিৎসক পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানান, বেড না থাকায় মেঝের নোংড়া পরিবেশে তাদের থাকতে হচ্ছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, যা আছে তাও অনেক নোংড়া। টয়লেটে যাওয়ার জন্য সিরিয়ালে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। যা ডায়রিয়া রোগীদের জন্য খুব কষ্টের।
হেতালবুনিয়া গ্রামের নাজমীন বেগম জানান, আমার মেয়ে (তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী) রেজবীকে সকালে বমি ও পাতলা পায়খানা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কোন জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে আছি। হাসপাতাল থেকে একটি স্যালাইন দিয়েছেন, তারপর বাহিরের দোকান থেকে কিনছি। কিন্তু এখন দোকানেও স্যালাইন নাই। এখন মেয়েকে নিয়ে মহা চিন্তায় আছি।
হাসপাতালের সামনের কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, বিগত ত্রিশ বছরেও হাসপাতালে এতো ডায়রিয়ার রোগী দেখিনি। অর্ডার দিয়েও তিন দিন ধরে কোন কোম্পানী স্যালাইন সরবরাহ করছে না। যে কারনে আমাদের কোন দোকানেই কলেরার স্যালাইন নেই।
মেডিকেল অফিসার ডা: ইমরান খান জানান, গত শুক্রবার থেকে হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ মেঝে, করিডোর এমনকি সিঁড়িতে রোগীরা অবস্থান নিয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি কিন্তু প্রয়োজনীয় স্যালাইন সংকট ও ডায়রিয়া সংশ্লিষ্ট সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও মেট্রোনিডাজল ইনজেকশনসহ অন্যান্য ওষুধ না থাকায় ভর্তিকৃত রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। তরে পর্যাপ্ত খাবার সেলাইন আছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং স্যালাইন নেই। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা তাপস কুমার তালুকদার জনান, প্রতিদিন গড়ে ৬০/৭০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে যে স্যালাইন মজুত আছে এভাবে চললে ২/৩ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার জন্য সিভিল সার্জনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি।