মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন

কাঠালিয়ায় খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

কাঠালিয়ায় খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

উপজেলার চেঁচরী রামপুর ইউনিয়নের উত্তর চেঁচরী গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ কাটছেন একজন গাছি।

সাকিবুজ্জামান সবুর:

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় শীতের আগমনের সাথে সাথেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন এলাকার গাছিরা। প্রতিদিন বিকেল হলেই গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য খজুর গাছের মাথার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় মাটির কলসি, হাড়ি বা প্লাষ্টিকের বোতলে রস সংগ্রহের জন্য ঝুলিয়ে রাখেন। আবার সূর্য্যদয়ের সাথে সাথে গাছ থেকে মাটির কলসি, হাড়ি বা প্লাষ্টিকের বোতলে রসসহ সংগ্রহ করে থাকেন।

উপজেলার চেঁচরী রামপুর ইউনিয়নের উত্তর চেঁচরী গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একজন গাছি রস সংগ্রহের জন্য ঠক ঠক করে গাছ কাটছেন। ব্যস্ততার মধ্যেও কিছুক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে। বাবুল মিয়া নামের ওই গাছি বলেন, ‘শীত শুরুর আগেই আমরা নিজের ও গ্রামের অনেকের খেজুর গাছ টাকার বিনিময়ে কেটে থাকি। রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝাড়ার কাজ শেষ করে এখন রস সংগ্রহ শুরু করেছি।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিংড়াখালী গ্রাম এলাকার গাছি রফিক উদ্দিন বলেন, ‘খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করতে হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় হাড়িতে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই আমরা কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করি। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় হাড়ি বাঁধি, সকালে রস সংগ্রহ করি। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালেই এ রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে থাকেন।’

আমুয়া ইউনিয়নের গাছি কুদ্দুস হাওলাদার বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই শীত মৌসুমেই কয়েকটা মাস আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি।

এ ব্যপারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সামাজিক আন্দোলন কাঠালিয়ার সভাপতি তুহিন সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যতœ সহকারে বড় করা।’

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কৈখালী গ্রামের বাসিন্দা ও দন্ত চিকিৎসক মো. সাইফুল সরদার বলেন, আগের মতো গ্রামে এখন আর তেমন খেজুর গাছ নেই। পেশাদার গাছির সংখ্যাও কম। এক সময় আমাদের গ্রামে অনেক খেজুর গাছ দেখা যেত এবং প্রচুর রস কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন অনেক খুজেও রস পাওয়া যায় না। সরকারি সড়কের দু’পাশে যদি পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ লাগানো হয় তাহলে প্রতি বছর খেজুর গুড় বিক্রি করে সরকার প্রচুর টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। এবং এ উদ্যোগ সরকারী ভাবেই নেয়া উচিৎ।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। খেজুর গাছ ফসলের কোনো প্রকারের ক্ষতি করে না। এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। বর্তমান সময়ে খেজুর গাছ ও গাছির সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। তার পরেও যারা খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন কৃষি অফিস থেকে তাদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। এ উপজেলায় অনেক গাছি আছেন যারা রস সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন।

 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ 01774937755 অথবা ই-মেইল: kathaliabarta.com












All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana