মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

কাঠালিয়ায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে বসুন্ধরা শুভসংঘের সচেতনতামূলক সভা

কাঠালিয়ায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে বসুন্ধরা শুভসংঘের সচেতনতামূলক সভা

সাকিবুজ্জামান সবুর:

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ( ২৩ এপ্রিল) বুধবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আওরাবুনিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মনস্বিতা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ একেএম কামরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কালেরকন্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি ও দ্য-হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, বরিশাল অঞ্চলের কো-অডিনেটর ফারুক হোসেন খান, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো.মোশাররফ হোসেন ও দৈনিক নয়া দিগন্তের উপজেলা সংবাদদাতা মো.আমিনুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল চন্দ্র মিস্ত্রী’র সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা শুভ সংঘের উপজেলা শাখার সভাপতি সাকিবুজ্জামান সবুর।  এসময় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক শ্যামলী রানী বিশ^াস, বিনয় কৃষ্ণ হাওলাদার, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিশা মেহজাবিন ও একই শ্রেণীর তীর্থ রায় প্রমূখ।

বক্তারা বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। প্রতি বছর অসংখ্য শিশু এই মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসছে, যা দেশের জনস্বাস্থ্য খাতে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকুলীয় অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে, যখন নদী-নালা, খাল-বিল,পুকুর ও ডোবা পানিতে থই থই করে, তখন পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এ কর্মশালায় সচেতনাতার মাধ্যমে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে ব্যাপক আলোচনা করেন।

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ( ২৩ এপ্রিল) বুধবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আওরাবুনিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থী আরিশা মেহজাবিন বলেন, বেশির ভাগ শিশুরা খেলতে খেলতে পুকুর, ডোবা, খালের পানিতে ডুবে মারা যায়। অভিভাবকরা যদি নজর না রাখেন, তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটতে খুব বেশি সময় লাগে না। তাই আমাদের মা-বাবাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়াও আমাদের বড় ভাইবোনদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

অপর শিক্ষার্থী তীর্থ রায় বলেন, শিশু’র বয়স ৫ বছর হলেই তাদের সাঁতার শেখানো উচিত। এর আগের বয়সী শিশুদের নজরধারীতে রাখলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

বিশেষ অতিথি দৈনিক নয়া দিগন্তের উপজেলা সংবাদদাতা মো.আমিনুল ইসলাম বলেন, ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে দুপুরের পর যখন মা-বাবা বা অভিভাবকরা কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখনই শিশুরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারি প্রধান শিক্ষক মো.মোশাররফ হোসেন বলেন, ছোট শিশুরা যেহেতু সাঁতার জানে না। পানিতে পড়ে গেলে তারা আত্মরক্ষার কৌশল জানে না, তাই ডুবে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প থাকে না। এই অজ্ঞানতা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশেষ অতিথি ফারুক হোসেন খান বলেন, আগে অভিভাবকরা শিশুদের কোমড়ে ঘন্টা (ঝুনঝুনি) বেঁধে দিতো। এতে করে শিশুরা কোথায় যায় শব্দ শুনেই অভিভাবক শিশুদের গতিবিধি বুঝতে পারতেন। এখন কালের আবর্তে সেটি হারিয়ে গেছে। তাছাড়া অভিভাবকদের অসচেনতা, মোবাইল আশক্তি টেলিভিশনের সিরিয়ালে প্রতি এতটাই আশক্তি তাদের ছোট শিশুরা কোথায় যায়, কি করে তার খেয়াল থাকে না। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।

স্বাগত বক্তব্যে বসুন্ধরা শুভ সংঘের উপজেলা সভাপতি সাকিবুজ্জামান সবুর বলেন, বিশ^ সংস্থার ও ইউনিসেফের তথ্য মতে প্রতি বছর দেশে ১৭ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। যার মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু। বয়স ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১-৫ বছরের শিশুরাই ঝুঁকির মুখে থাকে। বর্ষা মৌসুম ও বন্যার সময় গ্রামাঞ্চলের ঘরের আশাপোশে পানিতে পুর্ন থাকে। এসময় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। দুর্ঘটনার শিকার শিশুদের উদ্ধার করে দ্রæত চিকিৎসা না দিতে পারায় অনেক শিশু অকালে ঝড়ে যায়। এর প্রতিকারে অভিভাবকদের সচেনতাই জরুরী।

প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ একেএম কামরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, শিশু পানিতে পড়ে মারা যাওয়া প্রতিরোধে পরিবারের সচেতনতা খুবই জরুরী। সেই সাথে যেসব পরিবারে ছোট ছোট শিশু রয়েছে তাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যেমন পুকুর ডোবা নালার পাশে নিরাপত্ত বেষ্টনি তৈরী করা,একটু বড় হলেই সাঁতার শেখানো, নিরাপদ খেলার স্থান নিশ্চিত করা, শিশু বাহিরে থাকলে প্রতি মূহুর্তে তার প্রতি নজর রাখাসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে শিশুদের রাখা সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, একটি শিশুর প্রাণ অমূল্য। প্রতিটি মৃত্যুই একটি পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু একটি প্রতিরোধযোগ্য দুর্যোগ। সামান্য সচেতনতা, সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই এই করুন মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে অভিভাবক ও শিশুদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ 01774937755 অথবা ই-মেইল: kathaliabarta.com












All rights reserved@KathaliaBarta 2016-2025
Design By Rana