সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ অপরাহ্ন

এক বছরে দেশে ধর্ষণের শিকার ১ হাজার ১১৭ কন্যাশিশু

এক বছরে দেশে ধর্ষণের শিকার ১ হাজার ১১৭ কন্যাশিশু

অনলাইন ডেস্ক:

২০২১ সালে সারা দেশে ১ হাজার ১১৭ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭২৩ জন এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫৫ জন। এ ছাড়া ২০০ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৬২৬। এই হিসাবে এক বছরে দেশে কন্যাশিশু ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২১-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেছে।

ধর্ষণের বিচার সম্পর্কে বলা হয়, ২০২১ সালে ৮০৪টি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিভাবকেরা আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিচারের জন্য কেবল জিডি, কেস ফাইল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে অল্পসংখ্যক আটক হলেও পরে আটক ব্যক্তিদের অধিকাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে নির্যাতিত কন্যাশিশুসহ অভিভাবকদের বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। চূড়ান্ত শাস্তির কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।

প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন ব্র‍্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি কর্মসূচি এবং প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন ইনিশিয়েটিভের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল এবং এডুকো বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশন গোলাম কিবরিয়া।

প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন শুধু ঘরের বাইরেই নয়, নিজ ঘরেও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়তই ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাগুলো সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।

যৌন হয়রানি ও নির্যাতন প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে ১১৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন বিশেষ শিশুও রয়েছে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০৪। গত বছরের তুলনায় এ বছর যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার প্রায় ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২১ সালে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ৫২ জন কন্যাশিশু।

মাঠ পর্যায়ে কন্যাশিশুদের বিভিন্ন ফোকাসড গ্রুপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো, প্রতিদিন অনেক কন্যাশিশু সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। তাদের অনেকের জানা নেই কীভাবে, কোথায়, কার সহায়তায় এ বিষয়ে অভিযোগ করা যায় বা এর ফলাফল কী হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন সহস্রাধিক কন্যাশিশু পর্নোগ্রাফি ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে গড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন ভিকটিম সাইবার হয়রানি সম্পর্কিত অভিযোগকেন্দ্রে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করে। প্রতিদিন ৩০টি অভিযোগ দাখিল হলে মাসে আনুমানিক ৯০০ অভিযোগ জমা হয় বলে ধরে নেওয়া যায়।

অ্যাসিড নিক্ষেপ সম্পর্কে জানানো হয়, ২০২১ সালে দেশে ১০ জন কন্যাশিশু অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ২০৬ জন কন্যাশিশু।

বাল্যবিবাহ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৮৬৮টি কন্যাশিশু। গড়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ২১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এ সময় ৮৭ জন কন্যাশিশুকে বাল্যবিবাহ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া এক বছরে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৭ জন কন্যাশিশু, এর মধ্যে যৌতুক প্রদান করতে না পারায় ৯ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

কন্যাশিশুদের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে ২৪২ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ৬১ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ৫৬ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া ২০২১ সালে ২৭২ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন দৈনিক পত্রিকা থেকে ৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৩টি ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব-ক্যাটাগরিতে এসব তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন প্রণয়ন, পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন ইত্যাদি।

 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

কাঠালিয়া বার্তা’য় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : মোবাইলঃ ০১৮৪২২৫৩১২২












All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana