মোছাদ্দেক হাওলাদার:
অনেক প্রতিকুলতা আর নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’এ ভর করে অগ্রহায়নের অকাল বর্ষনের ক্ষতির পরেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুরে এখন আমন কাটার ধুম চলছে।
পৌষের কুয়াশা ঘেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলের মাঠে মাঠে ধান কাটার এ দৃশ্য মানুষেরই চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে এবার বৃষ্টিতে ধানের গুনগত মান কিছুটা খারাপ হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলে ধানের দাম নিয়ে কৃষকের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে।
বরিশালে প্রতিমণ আমন ধান বিক্রি হয়েছে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ গত বছর এ অঞ্চলে ১১শ টাকা মন দরে আমন বিক্রি করেছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার এ খাদ্য ফসলের ক্ষতি কৃষি অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা ।
তবে প্রকৃতি নির্ভর বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় এবারো নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’এর প্রাভবে খরিপ-২ মৌসুমে ১১টি জেলায় আবাদকৃত ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের ফসল অকাল বর্ষনের পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনষ্টের পরিমান ছিল প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর । এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ঘরে তোলার পরে বেরো সহ বিভিন্ন ধরনের রবি আবাদেরও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তবে অগ্রহায়নের বৃষ্টির পানি এখনো অনেক নিচু জমিতে আটকে আছে।
সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ টন আমন চাল উৎপাদন লক্ষের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ২০ লাখ টন চাল পাবার কথা রয়েছে।
তবে দেশের অন্য এলাকাগুলোর মত এ অঞ্চলের সিংহভাগ জমি উচ্চ ফলনশীল-উফশী ও হাইব্রিড ধান আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে উৎপাদন ২৫ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব হত বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। উপরন্তু বরিশাল অঞ্চলে আমন-এর আবাদ ও উৎপাদন এখনো প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর।
গত বছর ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এবং ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দ‚র্যোগ নেমে আসে। ফলে সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ব বরিশাল অঞ্চলে আমনের উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম। গত বছর প্রকৃতিক দূর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয় বলে কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই উৎপাদন ছিল প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টন। তবে সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চলে এখনো উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদে অনেক পিছিয়ে। আমাদের ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট-‘ব্রি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ প্রযুক্তি এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে হস্তান্তরে ডিএই’র মাঠ কর্মীদের তেমন কোন ভ’মিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এঅঞ্চলে খরিপ-২ মৌসুমে যে ৮.৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে, তার মধ্যে সনাতন জাতের ধানই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরে। এসব ধানের উৎপাদন হেক্টর প্রতি মাত্র ১.৮০ টনের মত। অথচ হাইব্রীড জাতের আমনের অবাদ হয়েছে মাত্র ৫শ হেক্টরের মত। সারা দেশে অতি উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ধানের আবাদ হয় প্রায় আড়াই লাখ হেক্টরে। কিন্তু হাইব্রীড জাতের ধানের উৎপাদন দেশের অন্য এলাকার তুলনায় এ অঞ্চলে হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন বেশী। এমনকি উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদেও পিছিয়ে বরিশাল অঞ্চল।
তার পরেও এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে পৌষের সকাল থেকে ধান কাটার ধুম চলছে। ডিএই’র মতে এ অঞ্চলে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ আমন কর্তন সম্পন্ন হয়েছে।
একের পর এক প্রাকৃতিক দ‚র্যোগ আর উৎপাাদিত ধানের দাম কম পাবার পারেও দমে থাকছে না বরিশাল অঞ্চলেল কৃষি ওঙেযাদ্ধাগন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এককালের ‘বাংলার শষ্য ভান্ডার’ খ্যাত বরিশাল অঞ্চল এখনো সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. শহীদুল আলম,
বার্তা সম্পাদক : মো. সাকিবুজ্জামান সবুর
অফিস: কলেজ রোড, কাঠালিয়া, ঝালকাঠি- ৮৪৩০
মোবাইল: ০১৭১২৫২৯২৬৬, ০১৭৭৪৯৩৭৭৫৫
ই-মেইল: kathaliabarta@gmail.com
Copyright © 2025 কাঠালিয়া বার্তা. All rights reserved.