শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। গত বছর বরিশাল নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৩৬ দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবুও থামছে না তাদের দৌরাত্ম্য।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু দালালদের অপতৎপরতায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দালালদের সহযোগিতা করছেন হাসপাতালের কিছু কর্মচারী। দালালির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে অনেক কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী না হয়েও নিজেদের অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেন দালালরা। এরকম দেড় শতাধিক বহিরাগত ব্যক্তি রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি করানোসহ নানা হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। শয্যা সংখ্যার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকা ও বহির্বিভাগে ধারণক্ষমতার বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এ সংকটকে কাজে লাগাচ্ছেন এখানকার কিছু অসাধু কর্মচারী ও দালাল।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সরকারি হাসপাতালের ২০০ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকতে পারবে না। আইনের তোয়াক্কা না করেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অধিকাংশই দালালনির্ভর প্রতিষ্ঠান।
দালালদের এই নৈরাজ্য রুখতে থেমে নেই প্রশাসন। ২০২০ সালে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে র্যাব, ডিবি, পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ৩৬ দালালকে আটক করে। তাদের মধ্যে অনেককে জরিমানা এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দালাল প্রসঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল হক মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দালালদের কারণে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই দালালদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও তৎপর হওয়া উচিত।
শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখানে আসার পর এ পর্যন্ত হাসপাতালের ভিতর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ৬৫ জন দালাল, চোর, বাটপার ও ছিনতাইকারী ধরতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে প্রতিমাসেই জেলা প্রশাসক, র্যাব ও পুলিশকে অবহিত করা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে নিয়মিত চেকিং ও রোগীদের সতর্ক করছি।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোগী ধরার দালাল সম্পর্কে আগেও শুনেছি। এখানে আমি নতুন, তাই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত যথেষ্ট সজাগ আছে।’